চাকুরীর প্রশ্নফাঁস ও Proxy দেবার আগে সাবধান !
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করেছেন মিনা। মিনার মত আরো লাখ খানেক ছাত্র-ছাত্রীর স্বপ্নের চাকুরী এটি। লাখো পরিক্ষার্থীর কম্পিটিশনে নিজের মেধা ও যোগ্যতা প্রমাণের আত্ববিশ্বাস মিনার নেই। যদি এমন হয় যে, অতি মেধাবী কেউ মিনার পরিক্ষাটা দিয়ে তাকে পাশ করিয়ে দেয়? জ্বী, আমাদের দেশে এমন স্বপ্ন মোটেই অবাস্তব নয়।
Proxy কী?
আসলে একজনের পরিবর্তে বা অবর্তমানে তাহার বৈধ ডিউটি বা দ্বায়িত্ব অন্যকে দিয়ে সামাল দেয়াকে প্রক্সি বলে। আমাদের নতুন প্রজন্মের শব্দভান্ডারে প্রক্সি বলতে আসলে কারো এটেনডেন্স দেয়া, সই দিয়ে দেয়া বা অন্যের পরীক্ষা দেবার মত কিছু দু-নাম্বারি কাজকর্ম প্রক্সি হিসাবে ব্যাপক খ্যাতি লাভ করেছে।
আইনের ভাষায় প্রক্সি বলতে কোন অপরাধের নাম নেই। আইন অতি চালাক তাই প্রক্সির নাম দিয়েছে Personation কারন প্রক্সির চেয়ে এর কাভারেজ আরো ব্যাপক। সরকারী পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০ এর ৩ ধারা মতে কথিত প্রক্সির সংঙ্গা হচ্ছে- “পরীক্ষার্থী না হইয়াও যিনি সরকারী পরীক্ষার সময় নিজেকে একজন পরীক্ষার্থী হিসাবে ঘোষণা বা বিবেচনা করিয়া পরীক্ষা হলে প্রবেশ করেন ।”
সরকারী পরীক্ষা (অপরাধ) আইন, ১৯৮০,ধারা- ৩
আবার, যেহেতু আপনি পরিক্ষা দিতেই হলে ডুকছেন তাহলে আপনিও কি পরিক্ষার্থী ?
উক্ত আইনের ধারা ২(গ) বলে যে, ”পরীক্ষার্থী বলিতে সরকারী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বিবদ্যালয় বা বোর্ড কতৃর্ক যে ব্যক্তির নামে ইস্যুকৃত লিখিত প্রবেশপত্র, ক্ষমতাপত্র বা যে নামই বলা হউক না কেন সেই ব্যক্তিকে বুঝাইবে”।
Proxy দেবার শাস্তি :
১। যদি আপনি অন্য কোনো ব্যক্তির নামে বা কাল্পনিক নামে সরকারী যে কোন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন, তাহলে আপনার শাস্তি হইবে ৫ বছর মেয়াদি জেল। আবার আইনে এটাও নির্দিষ্ট আছে যে এই শাস্তি কোন ভাবেই ১ বছরের কম হবেনা। অর্থাৎ, আপনার বিরুদ্ধে স্বাক্ষ্য প্রমান যতই নগন্য হোক আদালত আপনাকে ১ বছরের কম সাজা দিতে পারবেনা।
২। আবার আপনি যদি প্রক্সি দিতে গিয়ে সরকারী পরীক্ষা সম্পর্কিত কোন ডকুমেন্ট, এডমিট, নম্বর, নম্বর ফর্দ টেবুলেশন শীট, সার্টিফিকেট বা যেকোনো প্রকারের পরিবর্তন করেন এবং সফল ভাবে ধরা পড়েন তাহলে আপনার জন্য রয়েছে ৪ বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ড, অথবা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড।
৩। বেশির ভাগ প্রক্সির সহিত প্রশ্নফাঁস বা কমন পড়ায় নিশ্চয়তা দিয়ে থাকেন অনেকে। আইনের ৪ ধারা বলে যে, কোনো সরকারী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হইবার পূর্বে যিনিই যেকোনো প্রকার ব্যক্ত করেন, প্রকাশ করেন, বা বিতরণ করেন-
(ক) উক্ত পরীক্ষার জন্য সন্নিবেশিত প্রশ্নযুক্ত যেকোনো প্রকার কাগজ; অথবা
(খ) এইরূপ পরীক্ষার প্রশ্ন আছে মর্মে মিথ্যাভাব বুঝাইবার অথবা এইরূপ পরীক্ষার জন্য যে প্রশ্ন দেওয়া হইয়াছে উহার সহিত হুবহু মিল আছে বিবেচনা করিতে পারে মনে করিয়া কোনো প্রশ্নযুক্ত কাগজ । তিনি ১০ বছর মেয়াদ পর্যন্ত কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন যাহা ৩ বছরের কম হইবে না, এবং তিনি অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হইবেন ।
আদালতের বাস্তবতা :
বেশিরভাগ প্রশ্নফাঁস ও প্রক্সির মামলা গুলোতে দেখা যায় RAB বা পুলিশের বিশেষ শাখা দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব অপরাধীদের গ্রুপ বা সিন্ডিকেট আকারে মামলা দেয়। আপনি হয়ত একা হয়েও কাকতালীয় কোন গ্রুপের সদস্য বা লিডার হয়ে যাবেন।
মামলায় শুধু পাবলিক পরীক্ষা আইনই নয় সাথে দন্ডবিধি, স্পেশাল লজ এবং জাল জালিয়াতি ও প্রতারণার ধারা যুক্ত করে দেয়। ফলশ্রুতিতে জামিনে মুক্তির বিষয়টা আকাশ কুসুম হয়ে যায়। কিছু দিন চেষ্টা তদ্বীর করে বড় ভাই, আত্বীয় স্বজন সবাই হাল ছেড়ে দিবে। তখন আপনাকে নিয়ে সবার একটাই হিসাব থাকবে, কাস্টডি কতদিন?
অল্পকিছু টাকার লোভে এসব অপরাধে জড়িয়ে একবার ধরা খেলে আপনার সারা জীবনের অর্জিত সব জ্ঞান ও মেধা ময়লার স্তুুপে পরিণত হবে। সরকারী বা আধা সরকারী চাকুরী করাতো দূরের কথা এপ্লাই করতেই পারবেন না।