বাটোয়ারা দলিল বা বন্টন দলিল কেন জরুরী এবং খরচ কত ?

বাটোয়ারা দলিল বা বন্টন দলিল কেন জরুরী এবং খরচ কত ?

বাটোয়ারা দলিল বা বন্টন দলিল এর অভাবে জমি সংক্রান্ত সিংহ ভাগ ঝামেলার তৈরি হয়। আমাদের দেশে ভাই-ভাই অথবা ভাই-বোনদের মধ্যে বিরোধের অন্যতম কারন বাটোয়ারা দলিল ছাড়া সম্পত্তি বন্টন বা ভাগ করা।

অতীতে লিখিত দলিলের ব্যবহার কম ছিল। মানুষ মুখে মুখে জমি-জমা বা সম্পত্তি বন্টন করে নিত। তখনকার দিনে দলিলের রেজিস্ট্রীও ইচ্ছামত ছিল কারন সে আমলে মানুষের জবানের মূল্যয়ন ছিল। মানুষের মুখের কথাই দলিলের মত ছিল। বর্তমানে, মানুষের জবান এবং বিশ্বাস দুটোই গায়েব হয়ে গেছে। সকালে এক কথা বললে বিকালেই অস্বীকার করে বসে। কাজেই, লিখিত দলিল ছাড়া কেই কারো উপর তেমন ভরসা করে না।

আরেক ভাবে বলতে গেলে বর্তমানে বন্টননামা বা বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রী করে নিতে হয় তাছাড়া সুনির্দিষ্ট ভাবে নামজারী বা নিজের হিস্যার বেচা-কেনা করতে বিভিন্ন ঝামেলার স্বীকার হতে হয়।

বাটোয়ারা দলিল বা বন্টননামা দলিল কী?

একাধিক ওয়ারিশ বা একাধিক ক্রেতার যার যার প্রাপ্য অংশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট জমিকে নিজ নিজ নামে আলাদা ভাবে সুনির্দিষ্ট করে দলিলে বর্ণন করে লিখিত দলিল সম্পাদন করলে তাকে বাটোয়ারা দলিল বলে। যেহেতু এই ধরনের দলিলের মাধ্যমে সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা হয় তাই এর নাম বাটোয়ারা বা বন্টন দলিল। ইংরেজিতে এই দলিল কে পার্টিশান ডিড বা ডিড অব ডিস্ট্রিবিউশান বলে।

উদাহরণ- করিম সাহেব ২ ছেলে এবং ১ মেয়েকে রেখে মারা গেল। করিম সাহেবের নামে ঢাকা সিটি জরীপ নং- ৭৮৯ এর ২২ দাগে ২ কাঠা ও ২৩ দাগে ২ কাঠা এবং ২৪ দাগে ১ কাঠা করে মোট ৫ কাঠা জমি আছে। করিম সাহেবের তিন ছেলে মেয়ে নিজেদের ভোগ-দখলে এবং বেচা-বিক্রীয় সুবিধার্থে বাটেয়ারা দলিল সম্পাদন করতে পারে এই ভাবে যে, ১ম ছেলে ২২ দাগে ২ কাঠা পাবে, ২য় ছেলে ২৩ দাগে ২ কাঠা পাবে এবং ১ মেয়ে ২৪ দাগে ১ কাঠা জমি পাবে।

বাটোয়ারা দলিল কেন জরুরী?

১। বাটোয়ারা দলিল ওয়ারিশান সম্পত্তি বন্টনের মৌলিক প্রমান। এতে করে ভবিষ্যতে জমির দখল এবংমালকানার বিষয়ে কোন সমস্যা তৈরি হয় না। এমন কি ওয়ারিশদের সম্পত্তি বন্টনে যদি মুসলিম ফারায়েজ নিয়ম মানা না হয় তবুও বন্টন দলিল সম্পাদন করলে দলিলের বর্ণনাই সর্ব অবস্থায় গ্রহণযোগ্য কারন পক্ষগণ পারপ্সরিক সমঝোতার মাধ্যমে সম্পত্তি বন্টন করে থাকে।

২। বাটোয়ারা দলিল হিস্য বন্টনের অন্যতম প্রমান এবং বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রী করতে সব মালিকদের সাব-রেজিস্ট্রার এর সামনে হাজির হতে হয় কাজেই কোন অংশিদারকে ঠকানো সুযোগ থাকেনা। যে কোন অংশিদার ভবিষ্যতে পুণরায় জমিতে তাহার মালিকানা দাবী করতে পারেনা।

৩। ওয়ারিশান সম্পত্তির নামজারি করতে হলে এসি ল্যান্ড অফিসে বাটোয়ারা দলিল দাখিল করা লাগে।

৪। ওয়ারিশান  জমি বিক্রি করতে গেলেও বন্টন দলিল প্রদর্শন করা প্রয়োজন ।

৫।  ভূমি জরিপকালীন হালনাগাদ মালিকানা লিপিবদ্ধ করতে এবং খতিয়ান নিজ নামে পেতে বাটোয়ারা দলিল উপস্থাপন করা লাগে।

৬। ওয়ারিশান সম্পত্তি ব্যংকে বন্দক রেখে লোন তুলার জন্য।

৭। ডেভেলপার এর সহিত বিল্ডিং নির্মান চুক্তি করার জন্য অথবা চুক্তি মোতাবেক প্রাপ্ত ফ্ল্যাট অন্যত্র বিক্রয় এবং নামজারী করার জন্য বাটোয়ারা দলিল আবশ্যক।

৮। মামলা-মোকদ্দমা হতে নিরাপদ থাকতে বা নিজের অবস্থান দৃঢ় রাখতে।

৯। মালিকানার টাইটেল যথাযথ রাখতে এবং সুবিধা জনক ভোগ-দখল করতে।

১০। বিদেশ গমণ বা সন্তানের বিদেশে পড়াশোনার জন্য বিদেশ ভর্তি করার সময় এসেট ক্লিয়ারেন্স নিতে বাটোয়ারা দলিল থাকা আবশ্যক।

জনপ্রিয় টপিকসমূহ
তালাক দেওয়ার বৈধ নিয়ম
জমির ১৫ প্রকার দলিল সহজে চেনার উপায়
জমি বেদখল হলে কী করবেন
মামলা থাকলে কি চাকরী হয়?
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সম্পর্কিত ২০ টি কমন প্রশ্ন-উত্তর 
মুসলিম আইনে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার
দলিল বাতিল হবার বিভিন্ন কারন 
জমির খতিয়ান যাচাই করুন অনলাইনে
ডিভোর্স ‍দিলে কি দেনমোহর দিতে হয়

 বাটোয়ারা দলিল করতে কি কি লাগবে?

১। যে ব্যাক্তির সম্পদের উত্তারাধিকার হিসাবে সম্পত্তি বন্টন করা হবে উক্ত ব্যক্তির মৃত্যু সনদ ।

২। মৃত ব্যক্তির ওয়ারিশ এর প্রমাণ হিসাবে ওয়ারিশ সনদ লাগবে

৩।  যে সম্পত্তি বন্টন হবে উক্ত সম্পত্তির দলিল লাগবে

৪।  সকল ওয়ারিশের সম্মতি থাকতে হবে

৫। ওয়ারিশগণের ছবি, ভোটার আইডি এবং অন্যন্য তথ্য।

৬। প্রতেকের অংশ আলাদা আলাদা ভাবে বর্ণনা করতে হবে।

৭। দলিলে সব পক্ষের সই লাগবে এবং রেজিস্ট্রির সময় সকলকে হাজির থাকতে হবে।

বাটোয়ারা দলিল করার নিয়ম এবং পদ্ধতি

বাটোয়ারা দলিল দুই ভাবে করা যায়-

(১) আদালতে বাটোয়ারা মোকদ্দমা

যে সম্পত্তি বন্টন করা হবে তাহা যদি সকল পক্ষগণ নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে বন্টন করতে অপারগ হয় অর্থাৎ কোন পক্ষ যদি দ্বিমত পোষণ করে তাহলে যেকোন পক্ষ আদালতের দ্বারস্ত হয়ে বাটোয়ারা মামলা করতে পারবে। বাটোয়ারা মামলা করলে আদালত সব পক্ষের উপস্থিতিতে প্রথমে তাদের নিজেদের সুবিধা মত বন্টনের সুযোগ দিবেন। সব পক্ষ একমত হতে ব্যার্থ হলে আদালত নিজে বন্টন করে দিবে। আদালত বন্টন করলে কারো কোন দাবী বা আপত্তি গ্রহণীয় হবে না। আদালেতের সিদ্ধান্ত সবার উপর বাধ্যকর।

সবচেয়ে বেশী পাঠিত হয়েছে
নতুন ভোটার নিবন্ধন এর পদ্ধতি- ২০২২ ।। NEW VOTER ENLISHMENT PROCESS -2022
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন ( প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, ফি এবং পদ্ধতি)
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সম্পর্কিত ২০ টি কমন প্রশ্ন-উত্তর

(২) বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রি

সকল পক্ষ বন্টনের বিষয়ে একমত হয়ে যার যার অংশ অনুযায়ী বাটোয়ারা দলিল রেজিস্ট্রী করতে হবে। দলিল রেজিস্ট্রি করতে হলে নিচের ধাপ গুলো অনুসরণ করতে হবে।

(ক) প্রথমে প্রয়োজনীয় সকল কাগজপত্র ও ছবি সহ একজন দক্ষ আইনজীবী বা দলিল লেখক এর কাছে যেতে হবে দলিলের মুসাবিদা করার জন্য। আইনজীবীর নিকট যার যার  অংশ এবং মৃত ব্যাক্তির সহিত সম্পর্ক স্পষ্ট করা জরুরী।

(খ)  আইনজীবী  মৃত ব্যক্তির পূর্বের দলিলগুলো বিশ্লেষণ করে ওয়ারিশদের ভাগ এবং আপোষমতে একটি নতুন বন্টন দলিল লিখবেন।

(গ) দলিলটি নিয়ে ওয়ারিশগণ সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যাবেন এবং নির্ধারিত ফি জমা দিবেন।

(ঘ) সর্বশেষ দলিলের সকল পক্ষগণ সাব-রেজিস্ট্রারের সম্মুখে বলিউমে স্বাক্ষর করবেন এবং সাব-রেজিস্ট্রার উক্ত দলিলটি রেজিস্ট্রি করে নিবেন।

(ঙ) রেজিস্ট্রি শেষে পক্ষগণ সবাই একটি করে বাটোয়ারা দলিলের জাবেদা নকল সংগ্রহ করবেন।

বন্টননামা (Partition) বা বাটোয়ারা দলিলের রেজিস্ট্রি খরচ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Contact us

Fill out the form below, and we will be in touch shortly.

Contact Information