হঠাৎ গ্রেফতার হলে করণীয় ।। What to do in sudden Arrest ?
অনেক রাত! হটাৎ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ। দরজা খোলার সাথে সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে সাদা পোশাকে একদল লোক আপনাকে বা আপনার পরিবারের কাউকে গ্রেফতার করে তাদের হেফাজতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে।
এমন পরিস্থিতির শিকার হলে করনীয়-একজন নাগরিক হিসেবে প্রথমেই আপনার জানার অধিকার রয়েছে কেন, কী কারণে আপনাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
তাই প্রথমেই জানতে চাইতে হবে –
১। সুনির্দিষ্ট অভিযোগটি কী?
২। আর তাদের সাথে গ্রেফতার সংক্রান্ত কোনো পরোয়ানা আছে কি না?
মনে রাখবেন গ্রেফতারের কারন জানাতে আর প্রয়োজনে পরোয়ানা (যদি থাকে) দেখাতে পুলিশ বাধ্য। যদি তারা আপনাকে পরোয়ানা দেখাতে সক্ষম না হয় তাহলে বুঝতে হবে তারা আপনাকে বিনা পরোয়ানায় আটক করতে আসছে (ধারা ৫৪)। এই ক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তাদের পরিচয় জানতে চাইবেন এবং তাদের পরিচয়পত্র দেখতে চাইবেন।
আরো পড়ুন:
৩। একা একা কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে পরিবার-পরিজনকে সঙ্গে সঙ্গে খবর দিন।
প্রয়োজনে আশপাশের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশীদের খবর দিন এবং যত পারা যায় লোকজন জড়ো করার চেষ্টা করুন। তারা আপনাকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে চায়, তাহলে আপনি একা তাদের সঙ্গে যাবেন না বলে তাদের জানিয়ে দেন এবং পরিবারের দু-একজনকে সঙ্গে নেবেন বলে তাদের জানান। প্রয়োজনে নিকটস্থ থানায় ফোন করে আপনার গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানান। এবং থানা এ সম্পর্কে অবগত অছে কি না, তা জানার চেষ্টা করুন।
গ্রেফতার পরবর্তী করনীয়
গ্রেফতার পরবর্তী আপনার আপনজনের প্রথম কাজ হল আইনি সহায়তার জন্য কোনো আইনজীবীর শরণাপন্ন হওয়া।
কারন একজন আইনজীবীই এই ক্ষেত্রে আপনাকে সব থেকে ভালো পরামর্শ দিতে পারবেন। গ্রেপ্তার হলে গ্রেপ্তারের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনাকে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে চালান দেবেন। এই সময় আইনজীবী আটক কৃত ব্যক্তির পক্ষে জামিনের আবেদন করবেন।
কোনো কারণে নিম্ন আদালতে জামিন না হলে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হতে হবে।
বর্তমানে সব থেকে পীড়াদায়ক বিষয় হল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে সাদা পোশাকে অপহরন এবং গুম।প্রথমেই বলে দেই, সাদা পোশাকে ৫৪ ধারায় কাউকে আটক করা যাবে না।
এ বিষয়ে ২০১৬ সালের ২৪ মে আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন এবং কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, যা ১০ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে পূর্ণাঙ্গ রায় হিসেবে প্রকাশিত হয়।
তাই আটককারী তার পরিচয়পত্র দেখাতে অস্বীকার করলে এক্ষেত্রে আপনি আত্নরক্ষার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন ।
আরো পড়ুন:
কোন ব্যক্তি নিখোঁজ থাকলে করণীয়
কোন ব্যক্তি নিখোঁজ থাকলে পার্শ্ববর্তী থানায় প্রথমে খোঁজ করতে হবে। যদি কোন সংবাদ পাওয়া না যায় সেক্ষেত্রে উচ্চ আদালত অর্থাৎ হাইকোর্ট বিভাগে জরুরী ভিত্তিতে রীট করতে পারে।
অবৈধ আটকাদেশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকর আইনি পদক্ষেপ হচ্ছে “হেবিয়াস কর্পাস” রীট করা। হেবিয়াস কর্পাসের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে “সশরীরে হাজির করা”। যখনই আদালতে নিখোঁজ কোন ব্যক্তি সম্পর্কে আবেদন করা হয় যাকে সর্বশেষ পুলিশের হেফাজতে দেখা গেছে তখন আদালত পুলিশকে আটকৃত ব্যক্তিকে সশরীরে হাজির করার জন্য সমন জারি করে।
এমনকি আটকাদেশ যদি অবৈধ প্রমাণিত হয় তাহলে ভিকটিমকে ক্ষতিপূরণ প্রদানেরও নির্দেশ দিতে পারে উচ্চ আদালত।মনে রাখবেন, সাবধানতা আর সচেতনতা কখনো বিফলে যায় না।
তাই আইন জানুন সচেতন হঊন।