+8801929125100

বার কাউন্সিল ভাইভা : ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের আগে ও পরে

বার কাউন্সিল আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষার সবচেয়ে সহজ ধাপ হল ভাইভা পরীক্ষা। আইনজীবীদের পেশাগত মান উন্নয়নে দিন দিন কঠিন থেকে কঠিনতর হচ্ছে বার কাউন্সিল এর এম.সি.কিউ (MCQ), রিটেন (Written) ও ভাইভার( Viva) প্রশ্ন নির্বাচন।

অন্যন্য চাকুরীর ভাইভার সাথে বার কাউন্সিলের ভাইভার অনেক তফাত আছে। বার কাউন্সিল ভাইভায় সবচেয়ে বেশী যে জিনিসটা ফোকাস করা হয় তা হচ্ছে- আইনজীবী হবার জন্য আপনি যথেষ্ট ব্যাক্তিত্ব, বুদ্ধিমত্তা ও বিনয়ী কিনা?  আইনপেশা চর্চা নির্ভর, তাই আপনী কত কি জানেন সেটা বোর্ড খুঁজতে যাবেনা। কোন প্রশ্ন না পারলে ভয় পাবেন না, আপনি না পারায় মূহূর্তটা কিভাবে উপস্থিত বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগ করে সামলে নিবেন সেটাই বোর্ডের কাছে দেখার বিষয়।

প্রথমবার যারা ভাইবা দেয় তাদের ভিতর অনেক সংকোচ ও উৎকন্ঠা দেখা যায়। এছাড়াও ভাইভা মেনার সম্পর্কে ধারনা না থাকায় অনাকাঙ্খিত-অনভিপ্রেত ঘটনার স্বীকার হয়ে ব্যার্থতার বলি হতে পারে।

ভাইভা বোর্ডে প্রবেশের আগে ও পরে –

১। যারা ঢাকার বাইরে আছেন তারা একদিন আগেই যাবেন। দরকারি সব কাগজাদি রেডি রাখবেন ।

২। আগের দিন অবশই ভালো একটা ঘুম দিবেন।  ভাইভা বোর্ডে সাথে মোবাইল না রাখাই শ্রেয় ।

৩। আপনার পোশাক যেন মার্জিত হয় । ছেলেরা সাদা শার্ট , কালো প্যান্ট , কালো কোট, লাল টাই এবং  সু (কালি করা) পড়বেন । মেয়েরাও আদালতের জন্য নির্ধারিত পোশাক পড়ে  যাবেন ।

৪। ভিতরে প্রবেশের অনুমতি নিন। অনুমতি দিলে রুমে ঢুকে আস্তে করে দরজা বন্ধ করে ধীর পদক্ষেপে হেটে বোর্ডের
সামনে গিয়ে বলবেন, আসসালামু-আলাইকুম। সালামের উত্তর দিয়ে বসতে বললে বসবেন, না বললে ১০ সেকেন্ডের মত দাঁড়িয়ে থাকার পর বলবেন, স্যার, আমি কি বসতে পারি?

৫। ভাইভা বোর্ডে চেয়ারের হাতলে বা টেবিলে হাত রাখবেন না , সোজা সাবলীলম ভাবে বসবেন। চেয়ার যদি টেবিলের খুব কাছাকাছি থাকে, তাহলে দুই হাত দিয়ে আলতো করে ধরে একটু পিছিয়ে নিয়ে চেয়ারে বসবেন। বসার আগে আবারো চেয়ারটাকে একটু এগিয়ে ঠিক পজিশনে নিয়ে আসুন (তবে এই দরজা খোলা বা চেয়ারে বসার সময় কোন শব্দ যেন না হয়, সেটি লক্ষ্য রাখুন)।

৬। কুজো হয়ে বসবেন না, আবার মেরুদণ্ড সোজা টানটান করে হাস্যকরভাবেও বসবেন না।

৭। আপনি নরমালি যেমন, তেমন বিহ্যাব করুন। স্যাররা মজার কিছু বললে বা ওরকম সলিচুয়শন ক্রিয়েট হলে মৃদু হাসবেন, অন্যসময় আত্মবিশ্বাস ও বিনয়ের সমন্বয়ে ভদ্রোচিত একটা ভাব বজায় রাখতে চেষ্টা করুন। চেহারায় উদ্ধত,গম্ভীর কিংবা ভয়ার্ত ভাব আনবেন না।

৮। প্রশ্নকর্তার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলা, প্রশ্ন ও উত্তরের ভাষাগত সাদৃশ্য (অর্থাৎ, যে ভাষায় প্রশ্ন হয়েছে, সে ভাষায় উত্তর) বজায় রাখা, ধীরস্থির থাকা এবং ছটপট করা, নখ ছিড়া, নাকে হাত দেওয়া, বারবার কাশির মত শব্দ করা, নাক টানাসহ সকল প্রকার মুদ্রাদোষ পরিহার করতে সচেষ্ট হোন।

৯। যারা ভাইভা নিতে আসেন তাদের যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন আনবেন না মনে। বোর্ড সদস্যদের বোকা ভেবে কোন প্রকার আলগা চালাকি, মিথ্যা তথ্য দেওয়া, তর্কে লিপ্ত হওয়া হওয়া থেকে বিরত থাকুন। ব্যক্তিগত বা রাজনৈতিক প্রশ্নে নিজের উপস্থিত বুদ্ধির পরিচয় দিন।

১০। উত্তর দেওয়ার সময় এমন কোন শব্দ/ টার্ম ব্যবহার করবেন না, যে সম্পর্কে আপনি সম্যক অবহিত নন। বরং চেষ্টা করুন যেসব টপিকে আপনার ভাল দখল আছে, সে টপিক রিলেটেড শব্দাবলি ব্যবহারের। কারন, আপনার মুখে উচ্চারিত যেকোন একটি শব্দকে বেইজ করে পরের প্রশ্ন হওয়ার চান্স ৯০%।

১১। যা বলবেন স্পষ্টভাবে বলবেন, কথা বলার সময় হাত নাড়াবেন না ,তাড়াহুড়ো করবেন না, সময় নিয়ে একটু চিন্তা করে উত্তর দিন।  ২-১ টা প্রশ্ন পারা না পারাতে কিচ্ছু আসেনা, তবে আপনি যদি একদম সামান্য বিষয় যা সবাই জানে , তা উত্তর দিতে না পারেন সেটা আপনার নেগেটিভ কিছু ।

১২। ভাইভা বোর্ডে গিয়ে অনেকে সব গুলিয়ে ফেলে । যে যত সহজ থাকবে তার ভাইভা ভালো হবার সম্ভাবনা তত বেশি । অনেক সময় স্যাররা ঘাবড়ানোর বা রাগানোর চেষ্টা করতে পারেন ,তখন ঠাণ্ডা মাথায় উত্তর করুন ।

যেমন, আপনাকে প্রশ্ন করতে পারে ”সার্টিফিকেট কতো দিয়ে কিনেছো?, ওমুক ভার্সিটি তো সার্টিফিকেট বিক্রী করে।” এসব প্রশ্নে বুদ্ধীদিপ্ত উত্তর দিন।

১৩। বাংলায় প্রশ্ন করলে বাংলায় এবং ইংরেজিতে প্রশ্ন করলে ইংরেজিতে উত্তর দিন । বোকার মত প্রশ্ন করবেন না যে স্যার বাংলায় নাকি ইংলিশে বলবো ?

১৪। কেউ ভাইভা শেষ করে বের হবার সাথে সাথে মৌমাছির মত তার পেছনে ছুটে অনেকে প্রশ্ন করার জন্য। এটা একদম করবেন না , কারন একেকজন বের হয়ে একেক কথা বলবে, মিথ্যা বলবে। ”বোর্ডে অনেক কঠিন প্রশ্ন ধরে, আরে ভাই অমুক স্যার প্রাইভেট/পাবলিক পাইলে সিলেবাসের বাইরে ধরে।” এগুলা শুনে আপনার RAM অটো স্লো হয়ে যাবে।

১৫।দুয়েকটা প্রশ্নের উত্তর করতে না পারলেও ঘাবড়ে যাবেন না। বিনয়ের অবতার সেজে বলুন, ‘স্যরি স্যার, এই প্রশ্নটির উত্তর আমার জানা নেই’। নিজেকে উৎসাহী শ্রোতা হিসেবে উপস্থাপন করুন।

১৬। অ্যাকাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডের সাথে প্রাকটিস রিলেটেড জ্ঞান জাহির করুন। আপনার এলাকার প্রথিতযশা আইনজীবী, বিচারপতি,এটর্নী, সাবেক ও বর্তমান সংসদ সম্পর্কে ধারনা রাখুন।

১৭।  রাজনৈতিক বিভিন্ন বিরোধপূর্ণ ইস্যু নিয়ে পজিটিভ উত্তর দিন।  

১৮। ধর্মীয় পোশাকে কোনো বাধা নেই। দাড়ি টুপি নো প্রবলেম। পরিপাটি হয়ে যাবেন।

 ১৯। বলার সময় যদি হঠাৎ তোতলাতে থাকেন কিংবা খেই হারিয়ে ফেলেন, তাহলে একটু থেমে এরপর আবার উত্তর করা শুরু করবেন।

২০। বোর্ড থেকে বের হবার সময় সালাম ও মুচকি হাসি দিতে ভুলবেন না।

Facebook
Twitter
LinkedIn

সাম্প্রতিক পোস্ট

নামজারী আবেদন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া

কামাল দুই বিঘা জমির মালিক এবং সে নিয়মিত সরকারী খাজনা পরিশোধ করে থাকে। সরকারী অফিসে লেখা আছে যে, কাওলা মৌজার আরএস ৫১০ দাগের ২ বিঘা জমির মালিক কামাল। পরবর্তীতে, কামাল উক্ত জমি রহমত এর নিকট বিক্রী করে। যেহেতু বর্তমানে রহমত মালিক কাজেই কামালের নাম কেটে রহমতের নাম সরকারী কাগজপত্রে লিপিবদ্ধ করাই মূলত নামজারী ।

Read More »
তালাক দেওয়ার নিয়ম

বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার পদ্ধতি

বিদেশ থেকে আম-মোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিযুক্ত করে তালাক প্রদানের যথাযর্থতা সম্পর্কে আইনে সুনির্দিষ্ট কোন বক্তব্য নেই। প্রচলিত প্রাকটিস এবং আইনজীবীদের পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই আম-মোক্তারনামা মূলে তালাকের একটা প্রচলন আছে। তবে এ ধরনের তালাক বহুল বিতর্কীত কারন তালাক সংশ্লিস্ট আইনের কিছু বিধান প্রকৃত অর্থে চর্চা করার সুযোগ থাকেনা।

Read More »

আমমোক্তারনামা দলিল বাতিলের নিয়ম

পাওয়ার অব এটর্নি বা আমমোক্তারনামা দলিল এমন একটি লিগ্যাল ডকেুমেন্ট যার মাধ্যমে একজন ব্যাক্তি তাহার পক্ষে কোন নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করার জন্য তাহার মনোনীত ও বিশ্বস্ত ব্যাক্তিকে ক্ষমতা অর্পণ করে।  আমাদের দেশে পাওয়ার অব এটর্নীর কথা শুনলে অনেকেই জমি-জমার ক্ষমতা অর্পণকে বুঝায়। প্রকৃতপক্ষে পাওয়ার অব এটর্নি বা আমমোক্তারনামা দলিলের মাধ্যমে জমি-জমা ছাড়া আরো অনেক কাজ করা যায়।

Read More »

Recent