হেবা দলিল রেজিস্ট্রী এবং বাতিল করার সহজ নিয়ম
কখন হেবা দলিল করা হয় ?
আব্দুল কাদির সাহেব ও হাসান সাহেবরা সহোদর দুই ভাই। কাদের সাহেব এর সাথে হাসান সাহেব এবং তার ছেলেদের সম্পর্ক ভালনা। কাদির সাহেবের ১টি মাত্র মেয়ে। যেহেতু, একটি মাত্র মেয়ে কাজেই কাদির সাহেব চান যে তার কষ্টার্জিত সম্পদ যেন তার মেয়ে একাই মালিক হতে পারে এ জন্য দলিল করে দিতে। কিন্ত কিভাবে সব সম্পত্তি শুধু মেয়েকে লিখে দিবেন সে বিষয়ে কোন ধারনা নেই তার। অন্যন্য ওয়ারিশ থাকা সত্তেও সব সম্পদ কি শুধু মেয়েকে লিখা দেয়া যাবে? জ্বী ! (হেবা দলিল)
মুসলিম আইনের এর স্পষ্ট বিধান করা আছে। কেউ যদি জিবিত অবস্থায় তাহার সম্পত্তি সম্পূর্ণভাবে কারো নামে লিখে দিতে চায় তাহলে দানপত্র দলিল এর মাধ্যমে সহজেই হেবা করে দিতে পারবে। আমাদের দেশে যা হেবা দলিল নামে অধিক পরিচিত। দান শব্দের আরবী প্রতিশব্দ হেবা। কোন অর্থ বা বিনিময় ছাড়া কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যে দলিলের মাধ্যমে কোন সম্পত্তি হস্তান্তর করেন তাকে হেবা দলিল বলে।
হেবা দলিল কীভাবে করতে হয় ?
হেবা দলিলের প্রথম শর্ত হল দান করতে হবে কোন কিছুর বিনিময় ছাড়া। কোন অর্থ বা সুবিধার বিনিময়ে দান করা বৈধ নয়। তবে, দান দলিলে দাতা গ্রহীতার উদ্দেশে বিশেষ কোন শর্ত সন্নিবেশ করতে পারে।
অপরদিকে, হেবা দলিল দাতার স্বইচ্ছা এবং স্বতন্ত্র বিবেচনায় করতে হবে। কোন হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতী বিা বল প্রয়োগ করে করতে বাধ্য করলে সেই দান বৈধ হবেনা এবং যদি দলিল রেজি: করা হয় তা পরবর্তীতে বাতিল হয়ে যাবে।
কাদের বরাবর দান বা হেবা করা যাবে-
কার কার বরাবরে দান করা যাবে তার বিস্তারিত বলা হয়েছে রেজিস্ট্রেশন আইন-১৯০৮, এর ধারা ৭৮এ (বি) নং দফায়। নিন্মে বর্নিত ব্যাক্তি বরাবরে দান করলে দালিলের রেজিস্ট্রেশন খরচ হবে মাত্র ১০০ টাকা যেমন-
আত্বীয় ও রক্ত সম্পর্কীত ব্যাক্তিবর্গ
১।স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে।
২। পিতা-মাতা ও সন্তানের মধ্যে।
৩। ভাই-ভাই, বোন-বোন অথবা ভাই-বোন এর মধ্যে।
৪।দাদা-দাদী, নানা-নানী থেকে নাতি-নাতনীর মধ্যে।
ধর্মীয় ও দাতর্ব্য প্রতিষ্ঠার বরাবরে দানের বিধান
দান দলিল রেজি: করার স্বাভাবিক রেজিস্ট্রেশন ফি (৪.৫%)প্রদান স্বাপেক্ষে যে কোন ব্যাক্তি এমনকি নাবালক বরাবরেও দান করা যাবে। আমরা দেখি আমাদের আশে পাশে মানুষ পরকালের কথা চিন্তা করে মসজিদ এবং মাদরাসায় জমি দান করে। এরকম দানকে জিবনীস্বত্তে দান বলে এবং এরম সম্পত্তি দান গ্রহীতা কেবল আজীবন ভোগ-দখল করতে পারে কোনরূপ বেচা-বিক্রয় বা হস্তান্তর করিতে পারে না।
দান বৈধ হবার ক্ষেত্রে তিনটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হয়, তা হলো–
১. দানকারী/দাতা কর্তৃক স্বইচ্ছায় হেবা বা দান করলেন বলে ঘোষণা প্রদান।
২. হেবা গ্রহীতা / দান গ্রহীতা তার বরাবরে প্রদত্ত দান গ্রহণ করেছেন বলে স্বীকার করা।
৩. হেবা দাতা কর্তৃক গ্রহীতাকে দানকৃত সম্পত্তির বাস্তব দখল প্রদান করা।
হেবা দলিল বা দান দলিল ও উইল এর মধ্যে পার্থক্য
দান এবং উইল সর্ম্পূণ আলাদা বিষয়। উইল দাতার মৃত্যুর পর আদালতের প্রবেট স্বাপেক্ষে কারযকর করা লাগে সেই সাথে মুসলিম আইন অনুসারে পুরো সম্পত্তি উইল করতে গেলে সকল ওয়ারিশদের সম্মতি প্রয়োজন হয়। দানের ক্ষেত্রে সাথে সাথে দখল হস্তান্তর করা হয় এবং মালিকানা স্বত্ত তৈরি হয়। হেবা দলিল করার পর দখল হস্তান্তর করা হলে সেই ডিড বাতিল করা যায়না। কাজেই, হস্তান্তরের ক্ষেত্রে উইলের চেয়ে দান সর্বাধিক সুবিধা জনক।
বাধ্যতামূলক ভাবে হেবা দলিল রেজিস্ট্রি করতে হবে
হেবা দলিল সম্পাদনের পর তা সরকার নির্ধারিত ফি প্রদান স্বাপেক্ষে রেজিস্ট্রেশন করে নিতে হবে। ২০০৫ সালের ১ জুলাই হতে উহার রেজি: বাধ্যতামূলক করা হয়। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া দলিলের কায়েমী স্বার্থ দাবী করা যাবে না।
হেবা দলিল কি বাতিল করা যায় ?
সম্পাদন ও রেজিস্ট্রেশন এর পর ইচ্ছা মাফিক তা বাতিল বা প্রত্যাহার করার সুযোগ নেই। আদালতে রায়-ডিক্রী মোতাবেক দলিল বাতিলের মামলা করে বাতিল করার আবেদন করা লাগবে। গ্রহীতা কর্তৃক সম্পত্তির দখল বুঝে পাবার পর বাতিল করা যায় না। তবে কিছু ব্যাতিক্রম আছে যা নিম্নে বর্ণনা করা হল-
হেবা দলিল কখন বাতিল করা যায়
দখল প্রদানের আগে যে কোনো পর্যায়ে হেবা দলিল বাতিল করা সম্ভব। কারণ হেবার অন্যতম শর্ত হচ্ছে দখল হস্তান্তর করা। দখল হস্তান্তর না করলে দান সম্পূর্ণ হয় না। তবে কিছু ক্ষেত্রে দলিল বাতিল চাওয়া যায় যেমন,
(ক) দাতার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর পূর্বক দান করতে বাধ্য করলে।
(খ) ভয় ভীতী বা প্রলোবন দেখিযে দান দলিল সম্পাদন করলে।
(গ) দাতা মানসিক ভাবে বিকারগ্রস্ত থাকা অবস্থায় কৌশলে দান দলিল করলে।
(ঘ) দান দলিলের শর্ত পালনে ব্যার্থ হলে।
(ঙ) দখল প্রদানের পূর্বে দাতার মনের পরিবর্তন হলে।
তবে, কিছু অবস্থার প্রেক্ষিতে হেবা ডিড বাতিল করা যাবেনা ।
কখন দানপত্র দলিল বাতিল করা যায় না
(ক) দান দাতা-গ্রহীতা সম্পর্কে স্বামী বা স্ত্রী হইলে।
(খ) হেবা গ্রহীতা মারা গেলে।
(গ) উভয়ের মধ্যে বিবাহ অযোগ্য সম্পর্ক বিদ্যমান থাকিলে।
(ঘ) গ্রহীতা কর্তৃক দানে গৃহীত সম্পত্তি বিক্রি বা হস্তান্তর করে ফেললে।
(ঙ) সম্পত্তি বিলীন বা ধ্বংস হয়ে গেলে।
৫ টি সচরাচর জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন ও উত্তর
প্রশ্ন ১: হেবা দলিল কী?
উত্তর: একটি আইনি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার সম্পত্তি অন্য একজনকে উপহার হিসেবে দান করেন। এটি ইসলামী শরীয়াহ অনুযায়ী সম্পত্তি হস্তান্তরের একটি পদ্ধতি।
প্রশ্ন ২: হেবা দলিলের মাধ্যমে কী ধরনের সম্পত্তি হস্তান্তর করা যায়?
উত্তর: হেবা দলিলের মাধ্যমে স্থাবর সম্পত্তি (যেমন জমি, বাড়ি) এবং অস্থাবর সম্পত্তি (যেমন গয়না, টাকা) উভয়ই হস্তান্তর করা যেতে পারে।
প্রশ্ন ৩: হেবা দলিল তৈরির জন্য কি কি শর্ত পূরণ করতে হয়?
উত্তর: হেবা দলিলের জন্য প্রধান শর্ত হলো:
১. দাতা অবশ্যই সম্পত্তির বৈধ মালিক হতে হবে।
২. প্রাপককে হেবা গ্রহণ করতে হবে।
৩. দাতা ও প্রাপককে সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে।
৪. দলিলে স্বাক্ষর ও সাক্ষীর উপস্থিতি থাকতে হবে।
প্রশ্ন ৪: হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক কিনা?
উত্তর: হ্যাঁ, রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। দলিলটি রেজিস্ট্রি না হলে এটি আইনি স্বীকৃতি পাবে না এবং ভবিষ্যতে তা চ্যালেঞ্জ করা হতে পারে।
প্রশ্ন ৫: হেবা দলিলের জন্য কি কোনো ফি আছে?
উত্তর: হেবা দলিল রেজিস্ট্রেশনের সময় সরকারি ফি এবং অন্যান্য আইনি খরচ দিতে হতে পারে, যা জমির পরিমাণ ও অবস্থানের উপর নির্ভর করে।