জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সম্পর্কিত ২০ টি কমন প্রশ্ন-উত্তর ।। 20 Common FAQ about Correction of NID
রাষ্ট্রের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতির সবচেয়ে মূল্যবান দলিল হল জাতীয় পরিচয় পত্র। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা ছাড়াও বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা অর্জনের জন্য জাতীয় পরিচয় পত্র থাকা আবশ্যক। আমাদের দেশে জাতীয় পরিচয় পত্র প্রকাশনা, মুদ্রণ ও তথ্য ব্যাবস্থাপনায় জনগণের অসতকর্তা, অসাবধানতা সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনিচ্ছাকৃত ভুলের কারণে অনেকেই জাতীয় পরিচয় পত্রে বিভিন্ন ভুলের স্বীকার হন যা পরবর্তীতে সীমহীন দূর্ভোগের সৃষ্টি করে।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন, ঠিকানা পরিবর্তন, পিতা-মাতার নামের ভূল, জন্ম তারিখ সংশোধন সহ অন্যন্য বিষয়ে আমাদের কাছে বহুল জিজ্ঞাসিত ২০ টি প্রশ্ন এবং তাদের উত্তর নিয়ে আজকের আলোচনা। তো, চলুন শুরু করা যাক-
১। কিভাবে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করবো?
উত্তর: জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের জন্য উপজেলা, থানা অথবা জেলা নির্বাচন অফিসে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাথে সোনালী ব্যাংকে নির্ধারিত ফিস জমা দিয়ে সংশোধনের পক্ষে উপযুক্ত কাগজ-পত্র দাখিল পূর্বক আবেদন করতে হবে।
২। বিয়ের পর কিভাবে স্বামীর নাম লিপিবদ্ধ করবো?
উত্তর: জাতীয় পরিচয় পত্রে স্বামীর নাম অন্তর্র্ভূক্ত করতে হলে বিয়ের কাবিন অথবা অন্যন্য প্রমাণ সহ স্বামীর জাতীয়পত্রের কপি সহ সংশোধনের আবেদন করতে হবে। স্বামীর ঠিকানা নিজের জাতীয় পরিচয় পত্রে ব্যবহার করতে চাইলে সে বিষয়টিও আবেদনে উল্লেখ করতে হবে।
৩। তালাক বা বিবাহ বিচ্ছেদের পর কিভাবে স্বামী বা স্ত্রীর নাম কর্তন করবো?
উত্তর: জাতীয় পরিচয় পত্র হইতে স্বামী বা স্ত্রীর নাম কর্তন করতে চাইলে তালাক বা বিচ্ছেদ এর পক্ষে প্রমাণ দাখিল পূর্বক আবেদন করতে হবে।
৪। জাতীয় পরিচয় পত্রে পেশা পরিবর্তনের নিয়ম কি?
উত্তর: যদিও জাতীয় পরিচয় পত্রে পেশা উল্লেখ থাকে না তবুও আপনি চাইলে তা পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে, পেশা পরিবর্তনের জন্য প্রাসঙ্গিক আবেদনের সাথে যুক্ত করা আবশ্যক।
৫। আমার জাতীয় পরিচয় পত্রে ছবি অস্পষ্ট তাই পরিবর্তন করতে চাই, কিভাবে করবো?
উত্তর: অধিকাংশ লোকের ছবিই অস্পষ্ট। তবু কেউ যদি পরিবর্তন করতে চায় তাহলে, সরাসরি জাতীয় পরিচয় পত্র অনুবিভাগে মূল জাতীয় পরিচয় পত্র নিয়ে হাজির হয়ে নতুন করে ছবি উঠাতে পারবে।
৬। নিজের নাম বা পিতা-মাতার নামের বানান ভুল কিভাবে সংশোধন করবো?
উত্তর: নামের বানান বা অংশ বিশেষ পরিবর্তনের জন্য নির্দিষ্ট ফরমে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে আবেদন করতে হবে। আবেদনের সাথে যে সব কাগজ দাখিল করতে হবে তার তালিকা –
একাডেমিক সনদ (এস.এস.সি/এইচ.এস.সি/ বা অন্যন্য)।
পিতা/ মাতা বা স্বামী/স্ত্রীর জাতীয় পরিচয় পত্র বা কাবিন নামার কপি।
১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত ২০০ টাকা স্ট্যাম্পে নোটারীকৃত হলফনামা।
জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি।
ওয়ারিশান সনদ ( বিষেশ ক্ষেত্রে)।
ইউনিয়ন বা সিটি কর্পোরেশন প্রদত্ত নামের প্রত্যয়নপত্র।
৭। জাতীয় পরিচয় পত্রে বর্ণিত ঠিকানা কিভাবে পরিবর্তন বা সংশোধন করবো?
উত্তর: ঠিকানা পরিবর্তন সাধারনত দুটি পদ্ধতিতে করা যায়।
একই নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে সংশোধনের সাধারন নিয়মে আবেদন করতে হয়। কিন্তুু, ভিন্ন নির্বাচনী এলাকার মধ্যে ঠিকানা পরিবর্তন করতে চাইলে নির্ধারিত ফর্ম-১৩ মোতাবেক আবেদন করতে হবে।
৮। জাতীয় পরিচয় পত্রে রক্তের গ্রুপ কিভাবে যুক্ত করবো অথবা সংশোধন করবো?
উত্তর: জাতীয় পরিচয় পত্রে রক্তের গ্রুপ লিপিবদ্ধ না হলে কিংবা ভুল প্রকাশ হলে তা সংশোধনের জন্য আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট নির্বাচন অফিসে রক্তের গ্রুপ সম্পর্কিত ডায়াগনিসিস রিপোর্ট দাখিল করে আবেদন জমা দিতে হবে।
৯। বয়স বা জন্ম তারিখ ভুল উঠেছে, কিভাবে পরিবর্তন করবো?
উত্তর: জন্ম তারিখ বা বয়স পরিবর্তন বা সংশোধন জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের একটা জটিল পক্রিয়া। জন্ম তারিখ বা বয়স সংশোধনের আবেদনের সাথে উল্লেখিত দলিলাদি দাখিল করা আবশ্যক-
একাডেমিক সনদ (এস.এস.সি/এইচ.এস.সি/ বা অন্যন্য)।
জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি
১ম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে সম্পাদিত ২০০ টাকা স্ট্যাম্পে জন্ম তারিখের ভুল সংক্রান্ত নোটারীকৃত হলফনামা।
জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি।
টিকা কার্ড এর কপি
পাসপোর্ট থাকলে পাসপোর্ট এর কপি।
১০। কতবার জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করা যায়?
উত্তর: একই তথ্য এক বারের বেশী সংশোধন করা যায় না। তবে, ঠিকানা, স্বামীর নাম, স্ত্রীর নাম এবং রক্তের গ্রুপ একাধিকবার সংশোধন করা যায়।
১১। কিভাবে স্বাক্ষর পরিবর্তন করবো?
উত্তর: স্বাক্ষর পরিবর্তনের জন্য আপনার সর্বাধিক ব্যাবহৃত স্বাক্ষরের নমুনা সহ আবেদন করবেন এবং নতুন করে বায়োমেট্রিক এনরোলমেন্ট করতে হবে।
১২। পিতা / মাতা মারা গেলে জাতীয় পরিচয় পত্রে কিভাবে মৃত উল্লেখ করবো?
উত্তর: পিতা/মাতা বা স্বামী-স্ত্রী মারা গেলে মৃত ব্যাক্তির মৃত্যু সনদ সহ দরখাস্ত করতে হবে।
১৩। ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতা/মাতার নামের গড়মিল থাকলে কিভাবে সংশোধন করবো?
উত্তর: পিতা-মাতার নাম বিভিন্ন ভাই-বোনের জাতীয় পরিচয় পত্রে বিভিন্ন রকম আসলে র্নিধারিত ফরমে সব ভাই-বোন মিলে আবেদন করতে হবে এবং আবেদনের সাথে পিতা-মাতা সহ আবেদন কারীদের জাতীয় পরিচয় পত্র দাখিল করতে হবে। পিতা/মাতার সঠিক নাম এবং বর্তমানে থাকা ভুল নাম আবেদন ফরমে আলাদা আলাদা করে র্নিধারন করে দিতে হবে।
১৪। আমার জাতীয় পরিচয় পত্র হারিয়ে গেছে। কিভাবে আমি জাতীয় পরিচয় পত্র পেতে পারি?
উত্তর: হারিয়ে যাওয়া জাতীয় পরিচয় পত্র পেতে হলে থানায় প্রথমে জিডি করতে হবে। কিভাবে জিডি করবেন এ সংক্রান্ত আইন বিশারদের অন্য ভিডিও তে আলোচনা করা হয়েছে। জিডির কপি সহ সংশ্লিষ্ট অফিসে ডুপ্লিকেট কপির জন্য আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্রে অবশ্যই আবেদন কারীর পূর্ণ নাম, জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার অথবা ভোটার নং প্রদান করতে হবে। আবেদন করার পর আপনাকে একটি ডেলিভারি ¯øীপ দিবে। ডেলিভারী ¯িøপে উল্লেখিত তারিখে অথবা নির্ধারিত তারিখের ৫ কার্যদিবসের মধ্যে আপনার ডুপ্লিকেট জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করতে হবে। বর্তমানে, ডুপ্লিকেট কপির জন্য কোন ফি দরকার হয়না। তবে, স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহের জন্য সরকার র্নিধারিত ফি প্রদান করা লাগতে পারে।
১৫। হারানো জাতীয় পরিচয় পত্র পাবার আবেদন এবং সংশোধন এর আবেদন একসাথে করা যাবে?
উত্তর: আগে হারানো আইডি উঠাতে হবে। তারপর সংশোধনের আবেদন করতে হবে।
১৬। বিদেশে অবস্থান করার কারনে সময়মত ভোটার হতে পারিনি, এখন আমি কিভাবে ভোটার হব?
উত্তর: সরাসরি নির্বাচন কমিশন অফিসে উপস্থিত হয়ে নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে হবে অথবা পরবর্তী ভোটার তালিকা হালনাগাদ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
১৭। এক নামে বা জন্ম তারিখে কি একাধিক জাতীয় পরিচয় পত্র নিবন্ধন করতে পারবো?
উত্তর: অবশ্যই না। কেননা, বর্তমানে ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার কারনে একাধিক নিবন্ধন করা সম্ভব না। কোন ভাবে করে ফেললেও ধরা পড়লে রয়েছে জেল-জরিমানার ব্যাবস্থা।
১৮। আমার বাড়ি নোয়াখালী, আমি কি ঢাকায় ভোটার হতে পারবো?
উত্তর: জ¦ী, আপনি ঢাকা অথবা নোয়াখালী যে কোন এক যায়গায় ভোটার হতে পারবেন।
১৯। জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের প্রয়োজনীয় ফরম কোথায় পাব?
উত্তর: সরাসরি উপজেলা, থানা বা জেলা নির্বাচন অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। অথবা অনলাইনে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।
২০। ভোটার আইডি সংশোধন কি নিজে নিজে করা সম্ভব? কত টাকা লাগে?
উত্তর: ভোটার আইডি সংশোধন একটি সুসংগঠিত পদ্ধতি। আপনি একা একাই সংশোধন করতে পারবেন। কারো সাহায্য বা কোন টাকা-পয়সার দরকার হবে না।