Power of attorney Bangladesh

+8801929125100

তালাক প্রত্যাহার বা তালাক বাতিল করার নিয়ম

তালাক প্রত্যাহার বা তালাক বাতিল করার নিয়ম

তালাক বাতিলের প্রাথমিক বিষয়

বিয়ের মুসলিমদের জীবনের একটি কল্যণময় অধ্যায়। স্বামী-স্ত্রীর স্বর্গীয় বন্ধনের সূচনা হয় বিয়ের মাধ্যমে। সংসার জীবনে বিভিন্ন কারনে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সম্পর্কে ফাটল ধরে। বিয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায় তালাকের মাধ্যমে।

অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সংসার করার প্রবল ইচ্ছা থাকা স্বত্তের পরিবার বা সামাজিক কারণে সংসার ভেঙ্গে যায়। আবার বেশীর ভাগ তালাকের সূত্রপাত হয় কেবল দু-জনের ভূল-বুঝাবুঝি কে কেন্দ্র করে।

রাগের বশে বা ক্ষোভে অনেকেই আকস্মিক ভাবে তালাকের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে। পরবর্তীতে, চিন্তা ভাবনা করে যখন মনে হয় তালাক দেয়া ঠিক হয়নি তখন শুরু হয় বিড়ম্বনা। বিভিন্ন প্রশ্ন সামনে এসে দাড়ায়ঁ যেমন,

তালাক বাতিল করা যাবে কি?

কত দিনের মধ্যে তালাক প্রত্যাহার করা লাগবে?

আবার কি নতুন করে বিয়ে করতে হবে?

হিল্লা বিয়ের বিধান কি মানতে হবে?

আগের কাবিন কি পরিশোধ করে দিতে হবে? ইত্যাদি।

তালাক প্রত্যাহার বা বাতিল করার নিয়ম

তালাক দিলেই সাথে সাথে সেই তালাক কারযকর হয় না। মুসলিম শরীয়া আইন এবং পারিবারিক আইনের বিধান মতে তালাক দিবার ৯০ দিন পর সেই তালাক কার্যকর হবে। ৯০ দিনের এই সময়কে ইদ্দতকালীন পিরিয়ড বলা হয়। তালাক দেবার পর তালাক দাতা যদি মনে করে তার সিদ্ধান্ত ভূল এবং সে এই তালাক বাতিল করতে চায় তাহলে তালাক গ্রহীতার নিকট লিখিত নোটিশ দিয়া তালাক প্রত্যাহারের বিষয়টি জানাতে হবে। তালাক নোটিশের কপি সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান/সালিশী পরিষদে পাঠানো হলে উক্ত তালাক প্রত্যাহারের বিষয়টিও তাদের লিখিত আকারে বা নির্ধারিত শুনানীর তারিখে স্ব-শরীরে উভয়পক্ষ হাজির হয়ে তালাক বাতিলের বিষয়টি জানাতে হবে।

তালাক বাতিলের হলফনামা

তালাক দাতা কর্তৃক তালাক বাতিলের বিষয়টি হলফনামার মাধ্যমে স্বীকৃত হতে হবে। উক্ত হলফনামায় স্পষ্টক্ষরে বয়ান থাকিবে যে, তালাক প্রদানের সিদ্ধান্তটি ভূল ছিল এবং তালাক দাতা নিজের ভূল শুধরে তালাক গ্রহীতার সহিত পূর্বে ন্যায় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে সংসার করিতে আগ্রহী।

তালাক বাতিলের হলফনামা নমুনা ফরমেট


বরাবর, নোটারী পাবলিকের কার্যালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ।

হলফনামা
(স্ত্রী কর্তৃক তালাক প্রত্যাহার সংক্রান্তে)


আমি, নিম্ন স্বাক্ষরকারী রুমানা আনজুম , পিতা: মো: আকবর মিয়া, মাতা: শাহনাজ বেগম, সাং: বাড়ী নং- ৫৫, রোড নং- ৯, ব্লক- জি, বনানী, পোষ্ট: বনানী, থানা: বনানী, জেলা: ঢাকা। জন্ম তারিখ- ২৫/০৬/১৯৯৫ ইং, ধর্ম – ইসলাম, পেশা- গৃহীনি, জাতীয়তা- বাংলাদেশী, এই মর্মে হলফ পূর্বক ঘোষনা ও প্রকাশ করিতেছি যে,


১। আমি বাংলাদেশের স্থায়ী আইন মান্যকারী নাগরিক ও প্রাপ্ত বয়স্ক এবং যেকোন বিষয়ে হলফ করার উপযোগী বটে।


২। আমি আরও হলফ পূর্বক ঘোষনা করিতেছি যে, মিস্টার ইকরাম খান মিয়া, পিতা: খন্দকার মিয়া সাব, মাতা: হামিদা সরকার, বাড়ী নং – ২৩, রোড় নং- ৯/এ, ধানমন্ডি, শংকর, ঢাকা। বর্তমানে, বাড়ী নং- ৪, ব্লক- সি (৯ ম তলা) তাজমহল রোড, পোষ্ট ও থানা: মোহাম্মদপুর, জেলা: ঢাকা এর সহিত বিগত ৩৫/১২/২০১৬ ইং তারিখে উভয়ের সম্মতিতে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক ২,০০,০০১/- (দুই লক্ষ এক) টাকা দেন মোহর ধার্য্যে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই।


৩। বিবাহের পর আমি অত্র (হলফকারীনির) সহিত আমার স্বামী মিস্টার ইকরাম খান মিয়া এর দাম্পত্য জীবন সুখে শান্তিতে অতিবাহিতকালীন উভয়ের মধ্যে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ভুল বুঝাবুঝি হইলে আমি হলফকারীনি রাগের মাথায় আমার স্বামী মিস্টার ইকরাম খান মিয়া কে বিগত ২৩/০১/২০১৭ ইং তারিখে তালাকে তৌফিজ প্রদান করি যাহা নিকাহ রেজিষ্টার অফিস পাইনার বাজার, তেঘরিয়া, থানা: কেরাণীগঞ্জ, জিলা: ঢাকা এর বালাম নং- ১৯/ উ , পৃষ্ঠা নং- ৪২, তাং: ২৩/০১/২০১৭ ইং মাধ্যমে রেজিষ্ট্রিভূক্ত হয়।

পরবর্তীতে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করিয়া আমি বুঝিতে পারি যে, বিগত ২৩/০১/২০১৭ ইং তারিখে তালাক প্রদান করা সম্পূর্ণ অন্যায় ও ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। যাহা বুঝিতে পারিয়া আমি হলফকারী সুস্থ্য মস্তিষ্কে অন্যের বিনা প্ররোচনায় এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, আমার দেয়া বিগত ২৩/০১/২০১৭ ইং তারিখের তালাক প্রত্যাহার করিব এবং আমরা পূর্বের ন্যায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মিলেমিশে চলিব।

৪। আমি আরও ঘোষনা করিতেছি যে, অদ্য কাজী অফিসে গিয়ে আমার দেয়া তালাক প্রত্যাহার করিব এবং অত্র হলফনামার মাধ্যমে আমি আমার পূর্বের দেওয়া তালাক প্রত্যাহার করিয়া নিলাম এবং অদ্য হইতে আমি আমার স্বামী মিস্টার ইকরাম খান মিয়া এর সহিত স্বামী – স্ত্রী হিসেবে দাম্পত্য জীবন পুনরায় শুরু করিলাম।


৫। যেহেতু আমি অত্র হলফকারীনির সহিত আমার স্বামীর মধ্যে পূর্বের ভুল বুঝাবুঝির অবসান হইয়াছে তাই আমি তাহাকে দেওয়া তালাক প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিই। অদ্য মাননীয় নোটারী পাবলিকের সম্মুখে হাজির হয়ে উপস্থিত ৩ জন স্বাক্ষীর মোকাবেলায় আমার স্বামী মিস্টার ইকরাম খান মিয়া কে দেওয়া বিগত ২৩/০১/২০১৭ ইং তারিখে তালাকে তৌফিজ প্রত্যাহার করিলাম। অদ্য হইতে মিস্টার ইকরাম খান মিয়া আমার স্বামী এবং আমিও তাহার স্ত্রী। সেও আমাকে স্ত্রী হিসেবে দাবী করিতে পারিবে এবং আমিও তাহাকে স্বামী হিসাবে দাবী করিতে পারিব ।


৬। আমি অত্র হলফকারীনি যে কাজী অফিসে গিয়ে তালাকে তৌফিজ প্রদান করিয়াছি সেই কাজী অফিসে গিয়ে বিগত ২৩/০১/২০১৭ ইং তারিখে দেওয়া তালাকে তৌফিজ যাহা নিকাহ রেজিষ্টার অফিস পাইনার বাজার, তেঘরিয়া, থানা: কেরাণীগঞ্জ, জিলা: ঢাকা এর বালাম নং- ১৯/ উ , পৃষ্ঠা নং- ৪২, তাং: ২৩/০১/২০১৭ ইং প্রত্যাহার করিয়া নিলাম।


স্বাক্ষীগনের স্বাক্ষর হলফকারীর সাক্ষর


উপরোক্ত হলফনার যাবতীয় বক্তব্য আমার জ্ঞান ও বিশ্বাস মতে সম্পূর্ণ সত্য ও সঠিক জানিয়া অএ হলফনামায় নিজ নাম সহি সাক্ষর করিয়া দিলাম। অদ্য তাং- ১৭/ ০৪/ ২০১৭ ইং।


সনাক্তকারী আইনজীবী

হলফকারী আমার পরিচিত। তিনি আমার সম্মুখে অএ হলফনামায়

তাহার নিজ নাম সহি করিয়াছেন। আমি তাহাকে সনাক্ত করিলাম।

                                            -----------------------------
                                                   আইনজীবীর স্বাক্ষর        
Facebook
Twitter
LinkedIn

সাম্প্রতিক পোস্ট

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কি? কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আইন।

এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) কী? এআই (Artificial Intelligence) হলো এমন কম্পিউটার সিস্টেম, যা মানুষের মতো বুদ্ধিমত্তার প্রয়োজন হয় এমন কাজগুলো সম্পাদন করতে সক্ষম। উদাহরণস্বরূপ, সমস্যা সমাধান,

Read More »
ভাড়া চুক্তিপত্র

দোকান / বাণিজ্যিক স্পেস ভাড়া চুক্তিপত্র নমুনা

বাড়ি ভাড়া বা দোকান ভাড়া দেয়া-নেয়ার ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের মধ্যে সু-নির্দিষ্ট চুক্তি থাকা আবশ্যক। উক্ত চুক্তি পত্রে উভয়ৈর দ্বায়িত্ব – কর্তব্য এবং আর্থিক লেনদেনর বিষয় উল্লেখ থাকতে হয়। চুক্তি মেয়াদ শুরু, চুক্তি মেয়াদ শেষ এবং উপ-ভাড়াটিয়া নিয়োগ ও সার্ভিস চার্জ প্রদানের মতো সুক্ষ বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে দু-পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে নিতে হয়। ভাড়া চুক্তির মধ্যে এসব বিষয় উল্লেখ না থাকে ভাড়া দাতা এবং ভাড়াটিয়া দুজনের মধ্যে ভবিষ্যতে বিভিন্ন ঝামেলার সৃষ্টি হয়। একটি আদর্শ ভাড়া চুক্তির নমুনা এখানে দেয়া হল আমাদের পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে।

Read More »
দেনমোহর আদায়

দেনমোহর আদায় করবেন কিভাবে ?

আমাদের সমাজে দেখা যায় বিয়েতে দেনমোহর নগদ পরিশোধের ব্যাপারটি সরাসরি উপেক্ষা করা হয়। হাতে গোনা কয়েকটা বিয়ে ছাড়া নগদ দেনমোহর আদায় এর উদাহরন খুব কম। অনেকে আবার দেনমোহর দেয়া দূরের কথা বিয়েতে দেয়া বিভিন্ন উপহার কে উসূল দেখিয়ে দেনমোহরের সাথে স্বমন্বয় করে নেয়। বিয়ের পর বক্রী দোনমোহরের অর্থ নিজ তাগিদে কোন স্বামী পরিশোধ করেন না ফলে স্ত্রী তাহার দেনমোহরের পাওনা হতে আজীবন বঞ্চিত থাকেন।

Read More »

Recent