+8801929125100

বিদেশ থেকে ফোনে বা ভিডিও কলে বিয়ে – ইসলামী ও আইনী বিধান

বিদেশ থেকে ফোনে বা ভিডিও কলে বিয়ে – ইসলামী ও আইনী বিধান

বর্তমানে আমরা বাস করছি তথ্য-প্রযুক্তির যুগে। যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নয়ন দুনিয়াকে করেছে ছোট, গোটা পৃথীবিটাই যেন একটা গ্রাম। বিশ্বের এক প্রান্ত বসে অপর প্রান্তে কথা বলছি, ইন্টারনেট ব্যাবহার করে দেশে বসেই বিদেশে চাকুরি করছি , দুনিয়ার এককোণে বসে অপর কোণকে দেখতে পাচ্ছি সরাসরি।


ইদানীং দেখা যায়, ভিডিও কল বা ভিডিও কনফারেন্সে ছেলেমেয়ের মধ্যে বিয়ে সম্পন্ন হচ্ছে। ইন্টারনেট প্রযুক্তি আসার আগে টেলিফোনে বিয়ের চল ছিল একসময়। এখনো তা আছে। আর স্মার্টফোন তো রয়েছেই। এখন মেসেঞ্জার, ইমো, স্কাইপে বা বিভিন্ন ভিডিও কলের অ্যাপ আসার পর ভিডিও কলে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ঘটনা দেখা যাচ্ছে।
কিন্তু এ ধরনের টেলিফোন বা ভিডিও কলের মাধ্যমে হওয়া বিয়ের আইনগত ভিত্তি কী?
ইসলাম কি বলে?
ভিডিও কলে বিয়ের বৈধতাই বা কতটা?

মুসলিম বিয়ের বাধ্যতামূলক শর্ত ও আনুষ্ঠানিকতা

ইসলামী আইন মতে, বিয়ে হল ছেলে এবং মেয়ের সাংসারিক ও জৈবিক প্রয়োজন পূরণের একটি ধর্মীয় চুক্তি। ইসলামি বিয়েকে একটি দেওয়ানী চুক্তি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিয়ে ধর্মীয় ভাবে গ্রহণযোগ্য ও বৈধ হতে হলে কয়েকটি বাধ্যতামূলক শর্ত ও আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। সব শর্ত যথাযথ ভাবে পূরন করা না হলে বিয়ে আইন ও শরিয়ত সম্মত হয় না।

যেমন,
(১) বৈধ বিবাহের ১ম শর্ত হচ্ছে উভয় পক্ষের সম্মতি থাকতে হবে।
(২) বিবাহের একপক্ষ বিয়ের প্রস্তাব পেশ করবে অন্য পক্ষ স্বাক্ষীদের সামনে তা গ্রহণ করবে।
(৩) দুজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ সাক্ষী অথবা একজন পুরুষ ও দুজন নারী সাক্ষী থাকতে হবে।
(৪) বিয়েতে অবশ্যই দেনমোহর নির্ধারণ করতে হবে। দেনমোহর স্ত্রীর হক, স্বামীকে এই হক অবশ্যই আদায় করতে হবে।

টেলিফোনে বা ভিডিও কনফারেন্সে বিয়ে হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই আনুষ্ঠানিকতাগুলো যথাযথ ভাবে পালন করা হয়না। মুসলিম শরিয়ত মোতাবেক, বিয়েতে একই বৈঠকে সাক্ষীদের সামনে স্পষ্ট উচ্চারণের মাধ্যমে পাত্র-পাত্রীর সম্মতি নিতে হয়। বিয়েতে তিনবার কবুল বলার যে দৃশ্য আমরা দেখি সেটাই এই সম্মতি। যেহেতু ভিডিও কলে বিয়ে হলে পাত্র-পাত্রী দু-জন দুই যায়গায় থাকে কাজেই, অবস্থান বিবেচনায় সহ-বৈঠক নিশ্চিত করা প্রশ্নবিদ্ধ হয়। এছাড়া, উভয় পক্ষের স্বাক্ষীদের সামনে পাত্র-পাত্রীর কবুল অনুষ্ঠান যথাযথ ভাবে পালন করা সম্ভব হয়না। যদি, উভয় পক্ষের উপযুক্ত সাক্ষীর সামনে একই সময়ে বিয়ের প্রস্তাব প্রদান ও গ্রহণ করা না হয় তবে বিয়ে বৈধ হবে না।

আলেম-ওলামাগণের মতামত

ভিডিও কলে বিয়ের বিষয়ে, আলেম-ওলামাগণ দুই ভাগে মতামত দিয়েছেন। একপক্ষ মনে করেন, ভিডিও কলের বিয়েতে যদি শরিয়ত নির্ধারিত সব আনুষ্ঠানিকতা পালন করা হয়, তবে বিয়েটি বৈধ হতে পারে বলে অনেক ইসলামি গবেষক মতামত দিয়েছেন। আরেক পক্ষ মনে করেন, ভিডিও কলের বিয়েতে সব নিয়ম মেনে বিয়ে সম্পন্ন হলেও আন্তরিকতা ও মনের অন্তমিল পর্যাপ্ত হয় না, যা সম্মত্তিকে হালকা করে ফেলে কাজেই, দুই পক্ষের সরাসরি উপস্থিতিতে নিয়ম মাফিক বিয়ে করাটাই শরিয়ত সম্মত।

আইনী বিধান

আমাদের দেশের আইনে বিয়ে করার জন্য বরের বয়স কমপক্ষে ২১ বছর ও কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে। এছাড়া, মুসলিম বিয়ে ও তালাক (নিবন্ধন) আইন অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিয়ে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। আইন অনুযায়ী বিয়ে নিবন্ধন করার দায়িত্ব মূলত বরের। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। অন্যথায় দুই বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড ও তিন হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় ধরনের সাজা হবে। যে ক্ষেত্রে কাজি বিয়ে পড়িয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে কাজি তাৎক্ষণিকভাবে বিয়ে নিবন্ধন করবেন। কাজি ছাড়া অন্য কেউ বিয়ে পড়ালে ৩০ দিনের মধ্যে বিয়েটি কাজির ভলিউমে নিবন্ধন করাতে হবে।

ভিডিও কলে বিয়ের নিবন্ধন জটিলতা

কিন্তু ভিডিও কলে বিয়ে সম্পন্ন হলে বিয়ের নিবন্ধন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। যেহেতু, বিয়ের নিবন্ধন করতে হলে উভয় পক্ষকে সরাসরি হাজির থেকে কাজীর ভলিওমে স্বাক্ষর করতে হয় কাজেই, ভিডিও কলে বিয়ে পড়ানো হলে এক পক্ষ যেহেতু বিদেশে থাকে, সেহেতু বিয়ে নিবন্ধন করার ব্যাপারটি অসম্ভব হয়ে পড়ে। নিবন্ধন বা কাবিননামা ছাড়া বিয়ে প্রমাণ করা অসম্ভব, সেক্ষেত্রে সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও সন্তানের বৈধতা নিয়ে নানান জটিলতা দেখা দেয়।

সাবধানতা ও সচেতনতা

ভিডিও কলে বা মোবাইলে বিয়ে করার মূল কারন হচ্ছে পছন্দের পাত্র-পাত্রীকে চুক্তিবদ্ধ করে রাখা যেন সম্পর্কটা ভেঙ্গে না যায় অথবা পাত্র বা পাত্রী নিজেরা অন্যত্র বিয়ে করার ক্ষেত্রে বিবেক তাড়িত হয়। বিশেষ পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিয়ে করলে পরবর্তীতে, দুই পক্ষ দেশে অবস্থান করা অবস্থান পুণ:রায় কাবিননামা করে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে, শরিয়ত বা দেশীয় আইনে বিয়েটা সম্পূর্ণ বৈধ হবে এবং আইনগত কোন ঝামেলা হবে না।

Consult with our Specialist Lawyer

ADV Matin Sarkaer Mishuk

Phone- 01753173459

Mail – ainbisharod@gmail.com

AIN BISHAROD– (A Legist Law Firm)

Facebook
Twitter
LinkedIn

সাম্প্রতিক পোস্ট

নামজারী আবেদন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া

কামাল দুই বিঘা জমির মালিক এবং সে নিয়মিত সরকারী খাজনা পরিশোধ করে থাকে। সরকারী অফিসে লেখা আছে যে, কাওলা মৌজার আরএস ৫১০ দাগের ২ বিঘা জমির মালিক কামাল। পরবর্তীতে, কামাল উক্ত জমি রহমত এর নিকট বিক্রী করে। যেহেতু বর্তমানে রহমত মালিক কাজেই কামালের নাম কেটে রহমতের নাম সরকারী কাগজপত্রে লিপিবদ্ধ করাই মূলত নামজারী ।

Read More »
তালাক দেওয়ার নিয়ম

বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার পদ্ধতি

বিদেশ থেকে আম-মোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিযুক্ত করে তালাক প্রদানের যথাযর্থতা সম্পর্কে আইনে সুনির্দিষ্ট কোন বক্তব্য নেই। প্রচলিত প্রাকটিস এবং আইনজীবীদের পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই আম-মোক্তারনামা মূলে তালাকের একটা প্রচলন আছে। তবে এ ধরনের তালাক বহুল বিতর্কীত কারন তালাক সংশ্লিস্ট আইনের কিছু বিধান প্রকৃত অর্থে চর্চা করার সুযোগ থাকেনা।

Read More »

আমমোক্তারনামা দলিল বাতিলের নিয়ম

পাওয়ার অব এটর্নি বা আমমোক্তারনামা দলিল এমন একটি লিগ্যাল ডকেুমেন্ট যার মাধ্যমে একজন ব্যাক্তি তাহার পক্ষে কোন নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করার জন্য তাহার মনোনীত ও বিশ্বস্ত ব্যাক্তিকে ক্ষমতা অর্পণ করে।  আমাদের দেশে পাওয়ার অব এটর্নীর কথা শুনলে অনেকেই জমি-জমার ক্ষমতা অর্পণকে বুঝায়। প্রকৃতপক্ষে পাওয়ার অব এটর্নি বা আমমোক্তারনামা দলিলের মাধ্যমে জমি-জমা ছাড়া আরো অনেক কাজ করা যায়।

Read More »

Recent