Power of attorney বা আমমোক্তার নামা কখন প্রয়োজন ?
হাবিব সাহেব ইতালি প্রবাসী। দীর্ঘ সময়ের জমানো টাকায় ঢাকার সাভারে ৪ কাঠা জমি কিনেছেন ২০০৮ সালে । পারিবারিক জরূরী প্রয়োজনে নগদ টাকা দরকার। এত টাকা জোগাড় করতে জমি বিক্রী করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই তার। যেহেতু হাবিব সাহেব বর্তমানে ইতালি আছেন তাই দেশে এসে জমি বিক্রী করা সম্ভব নয়। (আমমোক্তার দলিল)

এ রকম পরিস্থীতিতে হাবিব সাহেব কিভাবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন, ২০১২ ( ২০১২ সনের ৩৫ নং আইন) অনুযায়ী বিদেশে থেকেই বাংলাদেশে জমি বিক্রী করবেন সে বিষয়ে পরামর্শ নিতে আইন বিশারদের অফিসে উপস্থিত তার বড় ছেলে ইয়ামিন।
চলুন ইয়ামিন ও আইন বিশারদের কথোপকথনের মাধ্যমে জেনে নিই কিভাবে বিদেশ থেকে পাওয়ার অব এ্যটর্নি বা আমমোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে সহজে জমি-বাড়ি বিক্রয়, ভাড়া, বন্ধক বা ডেভেলপার চুক্তি করা যায়।
আমমোক্তার দলিল রেজিস্ট্র্রীর নিয়ম জানুন
ইয়ামিন – আসসালামু আলাইকুম স্যার, কেমন আছেন? আমি আপনাদের ওয়েবসাইট থেকে আপনাদের সম্পর্কে জেনেছি। আমার আইনী পরামর্শ দরকার।
আইন বিশারদ- ও আলাইকুম সালাম ওয়া রহমতুল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। কি বিষয়ে সাহায্য করতে পারি আপনাকে?
ইয়ামিন – আমার বাবা ইতালি থাকে। আমাদের সাভারে ৪ কাঠা জমি আছে। আর্থিক সমস্যার কারনে সে জমি বিক্রি করা জরুরী কিন্তু বাবা দেশে আসতে পারছেনা। এ অবস্থায় বাবা কি জমি বিক্রি করতে পারবে?
আইন বিশারদ – জমি বিক্রী করার জন্য আপনার বাবা দেশে আসার কোন দরকার নেই। উনি রাজি থাকলে বিদেশ থেকেই জমি বিক্রী করতে পারবে ইনশাআল্লাহ।
ইয়ামিন – বিদেশে থেকেই কিভাবে জমি বিক্রী করা সম্ভব?
আইন বিশারদ- আপনার বাবার পক্ষে বিদেশ হতে আপনাকে অথবা আপনার বাবার বিশ্বস্ত যে-কোন লোককে আমমোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারে উক্ত জমি বিক্রয় করার জন্য।
ইয়ামিন – কিন্তু বিদেশ থেকে আমমোক্তারনামা দলিল কিভাবে করবে?
আইন বিশারদ – পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি আইন ও রেজিস্ট্রেশন বিধিমালার নিয়ম অনুযায়ী একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যেকোনো সাবালক ব্যক্তিকে তার পক্ষে আমমোক্তার বা প্রতিনিধি নিয়োগ করতে পারেন।
ইয়ামিন – আমি কি আমমোক্তার বা প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারি?
আইন বিশারদ- আপনার বয়স যদি ১৮ হয় এবং আপনি যদি সুস্থ্য বুদ্ধিসম্পন্ন বাংলাদেশী নাগরিক হন তাহলে আপনার বাবার সম্মতি স্বাপেক্ষে আপনিও তাহার আমমোক্তার হিসাবে নিয়োগ হতে পারেন।
ইয়ামিন – বিদেশ থেকে আমমোক্তারনামা দলিল সম্পাদন করতে কি কি আইনি প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে আমাকে যদি বুঝিয়ে বলতেন।
আইন বিশারদ – প্রথমে বাংলাদেশ থেকে আমমোক্তারনামা দলিলের কপি ড্রাফট করে ইমেইলের মাধ্যমে বা কুরিয়ারে বিদেশ পাঠাবেন। বিদেশ পাঠানোর পর দলিলে আমমোক্তার দাতা এবং গ্রহীতার ছবি সংযুক্ত করতে হবে।
বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এম্বাসিতে স্বশরীরে হাজির হয়ে বা ইমেইলের মাধ্যমে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে । অ্যাপার্টমেন্টের তারিখে ও সময়ে আমমোক্তারনামা দলিলের প্রিন্ট কপি সহ এম্বাসিতে সশরীরে হাজির হতে হবে।
দলিলের সমর্থনে সকল মালিকানার কাগজপত্র যেমন, খাজনা রশিদ, নামজারী, বায়া দলিল, খতিয়ান এবং আমমোক্তার গ্রহীতার ভোটার আইডি কার্ড এর ফটোকপি এম্বাসিতে দাখিল করতে হবে। এম্বাসিতে থাকা কনস্যুলেট অফিসারের সম্মুখে উক্ত দলিলে দলিলদাতা স্বাক্ষর করবেন এবং স্বাক্ষর হওয়ার পর দলিলের একটি ফটোকপি এম্বাসি অফিসে জমা দিতে হবে। দলিল সত্যয়ন করার পর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে দ্রুত সময়ে তা বাংলাদেশে গ্রহিতার কাছে পাঠাতে হবে।
ইয়ামিন – দেশে আসার পর করণীয় কি?
আইন বিশারদ – আমমোক্তারনামা দেশে আসার পর তা পররাষ্ট্রমন্ত্রণাল হতে সত্যায়িত করতে হবে। সত্যায়িত করার পর ডিসি অফিসের ট্রেজারী শাখায় জমা দিতে হবে স্ট্যাম্পিং এর জন্য। ডিসি অফিস সংশিষ্ট এসি ল্যান্ড অফিস এবং সম্পত্তি রাজউক বা গৃহায়ণের হলে উক্ত সংস্থার মতামত ও তদন্ত রিপোর্ট স্বাপেক্ষে স্ট্যম্প লাগিয়ে দলিল রেজিস্ট্রেশন করার জন্য সাব-রেজিস্টার এর কার্যলয়ে পাঠাবে। সাব-রেজিস্টার গ্রহিতার উপস্থিতিতে দলিল রেজিস্ট্রেশন করবেন।
- বিদেশ থেকে আমমোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি করার পদ্ধতি
- হেবা দলিল রেজিস্ট্রী এবং বাতিল করার সহজ নিয়ম
- জমির দলিল, খতিয়ান, নকশা, মৌজা ম্যাপ কোনটা কোন অফিসে পাবেন
- বাটোয়ারা দলিল বা বন্টন দলিল কেন জরুরী এবং খরচ কত ?
- জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেলে কি করবেন ?
ইয়ামিন- দলিলে স্ট্যাম্প লাগানোর পর কত দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রী করতে হয়?
আইন বিশারদ- স্ট্যাম্পিং করার ৯০ দিনের মধ্যে দলিল রেজিস্ট্রী করতে হবে।
ইয়ামিন– বিদেশ থেকে পাওয়ার আসার পর সব কাজ শেষ হতে কতদিন সময় লাগতে পারে ?
আইন বিশারদ – দলিলে দেশে আসার পর আনুমানিক ২০-২৫ দিন লাগতে পারে পুরো পক্রিয়া সম্পন্ন করতে।
ইয়ামিন– আম-মোক্তার কি যে কেউ দিতে পারবে?
আইন বিশারদ – জ্বী।
আমমোক্তার দলিল বাতিল
ইয়ামিন – যদি দাতা পরবর্তীতে তার নিযুক্ত আমমোক্তার বাতিল করতে চায় কিভাবে করবে?
আইন বিশারদ- আমমোক্তার দলিল যে ভাবে দেয়া হয়েছে একই পক্রিয়ায় তা বাতিল করা যায়।
ইয়ামিন – এ কাজে আমার কেমন খরচ হতে পারে?
আইন বিশারদ – এলাকা, জমির প্রকৃতি ও আমমোক্তারনামার উদ্দেশ্যের জন্য খরচ একেক রকম হয় তবে গড় খরচ ৪০-৬০ হাজার বা কম বেশী হতে পারে।
ইয়ামিন – আমমোক্তার নামা দলিল দিয়ে জমি বিক্রি করলে তা কি টেকসই হবে?
আইন বিশারদ – মুল মালিক বিক্রি করলে যেমন টেকসই হতো আমমোক্তার নামা দলিলের বিক্রয় সে রকম টেকসই হবে।
বিদেশ থেকে দেশে আমমোক্তার নিয়োগ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিশ্বাস ভাজন ব্যাক্তিকে মনোনীত করুন। নিয়মিত আমমোক্তার গ্রহীতার উপর নজরদারী করুন এবং যে উদ্দেশ্যে আম-মোক্তার নিয়োগ করবেন তো নিয়মিত ফলো আপ করুন। কোন কারণে আপনার সন্দেহ হলে আমমোক্তার গ্রহীতাকে দেওয়া পাওয়ার প্রত্যাহার করুন। জমির মূল কাগজপত্র সম্ভব হলে অন্যত্র গোপন হেফাজতে রাখুন কেবল প্রয়োজনের সময় আমমোক্তার গ্রহীতার নিকট হস্তান্তর করুন। কম খরচের কথা ভেবে বা কৃপণতা বশত: অনভিজ্ঞ বা অসাধু লোকের মাধ্যমে বিদেশ থেকে আমমোক্তার নামা দলিল সম্পাদন করবেন না। দলিলে তৈরিতে কোন জাল-জালিয়াতি বা মিথ্যা তথ্য প্রদান করবেন না এতে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ঝামেলা তৈরি হতে পারে।