+8801929125100

দেনমোহর কখন দিতে হবে ।। Dower when to be paid

দেনদেনমোহর কখন দিতে হবে ।। Dower when to be paid

দেনমোহর হচ্ছে বিয়ে উপলক্ষে স্বামী কর্তৃক বাধ্যতামূলকভাবে স্ত্রীকে নগদ অর্থ, সোনা-রুপা বা স্থাবর সম্পত্তি দান করা।

এটা প্রত্যেক স্বামীর উপর বাধ্যতামূলক।

অনেকে মনে করেন এটা স্ত্রীর উপর স্বামীর দয়া বা করুনা কিন্তু এটা আসলে একজন স্ত্রীর অধিকার। এটা স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ এবং এটা অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে এমন কি স্ত্রী দাবি না করলেও স্ত্রীকে উপযুক্ত দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে।

দেনমোহর

দেনমোহর এর পরিমান নির্ধারন

দেনমোহর নির্ধারিত বা অনির্ধারিত দুটোই হতে পারে।

হানাফি আইন অনুসারে, নির্ধারিত দেনমোহরের পরিমান হবে ১০ দিরহাম আর মালিকি আইনে ৩ দিরহাম। তবে সর্বোচ্চ কত হবে তা কোথাও উল্লেখ নাই।

আরো পড়ুন:

তালাক দেওয়ার বৈধ নিয়ম
জমির ১৫ প্রকার দলিল সহজে চেনার উপায়
জমি বেদখল হলে কী করবেন
মামলা থাকলে কি চাকরী হয়?
জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন সম্পর্কিত ২০ টি কমন প্রশ্ন-উত্তর 
মুসলিম আইনে সম্পত্তিতে নারীর অধিকার
দলিল বাতিল হবার বিভিন্ন কারন 
জমির খতিয়ান যাচাই করুন অনলাইনে
ডিভোর্স ‍দিলে কি দেনমোহর দিতে হয়

দেনমোহর এর দুইটি অংশ থাকে –

১। “মোহরে মু’আজ্জাল” বা নগদে প্রদেয়

২। “মোহরে মুয়াজ্জাল” বা বাকীতে প্রদেয়।

আমাদের দেশে মোহরের অর্থ বাকী রেখেই সাধারনত বিয়ে হয়ে থাকে। আর সেই বাকীই এক সময় ফাঁকিতে পরিনত হয়।

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে দেনমোহরের টাকা নগদে বিয়ের সাথে সাথে বা প্রথন মিলনের রাতের আগেই পরিশোধ করা উত্তম।

কোনো ভাবেই দেনমোহর বাকী রেখে বছরের পর বছর সংসার করা যাবে না। এটা দেনমোহরের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।

দেনমোহরের পরিমান ঠিক হয়ে গেলে আবার কমানো যায় না তবে চাইলে বাড়ানো যেতে পারে।

যদি দেনমোহর অনির্ধারিত থাকে এবং তা আদালতের হস্তক্ষেপে আদায় করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে আদালত পিতৃকুলের অন্যান্য মহিলার দেনমোহরের পরিপ্রেক্ষিতে দেনমোহর নির্ধারন করে দিবেন।

দেনমোহর – নারীর অধিকার ও আইনি প্রতিকার

দেনমোহর যদি বাকী থাকে এবং তা বাকী রেখেই যদি স্বামী মারা যায় তাহলে ঐ স্ত্রী দেনমোহরের জন্য কোন সম্পত্তি দখলে রাখতে পারবেন এবং যত দিন দেনমোহরের টাকা উসুল না হবে ততোদিন দখল চালিয়ে যেতে পারবেন। এই ধরনের দখলের জন্য স্বামীর উত্তরাধিকারীদের কোনরকম সম্মতি নেয়ার প্রয়োজন নাই।

বিধবা নারীর দখলীয় সম্পত্তিতে দুই ধরনের অধিকার আছে। একটি হল বকেয়া দেনমোহর আদায়ের অধিকার আর দ্বিতীয় হল উত্তরাধিকারী হিসেবে তার অধিকার।

কোনো নারী দেনমোহরের টাকা তাৎক্ষণিক চেয়ে না পেলে সে স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে ও দাম্পত্য মিলনে অস্বীকৃতি জানাতে পারবে। চাইলে সে আলাদা থাকতে পারবে এবং এক্ষেত্রে স্বামী তাকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে।

এক্ষেত্রে দেখা যায় স্বামী তার দাম্পত্য অধিকার পুনরুদ্ধারের মামলা করেন কিন্তু এই সব মামলা সাধারনত খারিজ হয়ে যায় কারন স্ত্রীর প্রাপ্য দেনমোহরের টাকা তিনি পরিশোধ করেন নি।

যদি স্বামী দেনমোহর দিতে না চায় বা এমন পরিস্থিতি হয় যে তাতে বোঝা যায় স্বামী দেনমোহর দিতে অস্বীকার করছে তাহলে স্ত্রী পারিবারিক আদালতে ৩ বছরের মধ্যে মামলা করতে পারবে।

তবে যদি এই সময় অতিবাহিত হয় তাহলে মামলা করার অধিকার নষ্ট হবে।

দেনমোহর- প্রচলিত কুসংস্কার

১) অনেকের মুখে প্রায়ই শোনা যায় যে, যদি মেয়ে নিজে তালাক দেয় তাহলে স্বামীকে মোহরানা পরিশোধ করতে হবে না। এটা এই আমাদের সব থেকে বড় ভূল ধারনা।

দেনমোহর যেকোন অবস্থায়ই স্বামীর ঋণ। এক্ষেত্রে দেনমোহর কখনোই মাফ হবে না।

১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ-বিচ্ছেদ আইনের ধারা ৫ -এ বলা হয়েছে, যে কারনেই একটি বিবাহের বিচ্ছেদ ঘটুক না কেন তা একজন স্ত্রীর দেনমোহর প্রাপ্তির অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করবে না।

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনে বলেছে, যদি কেঊ সালিশ পরিষদের অনুমতি ছাড়া আরেকটি বিয়ে করে তাহলে তার বর্তমান স্ত্রীকে তার দেনমোহর পরিশোধ করতে হবে আর যদি তা পরিশোধ করা না হয় তবে তা বকেয়া রাজস্বের মত আদায় হবে।

২) অনেক স্বামী তার স্ত্রীকে দামী উপহার দিয়ে মনে করেন এটার মাধ্যমে সে তার দেনমোহর পরিশোধ করেছে। এটা ভূল ধারনা। তবে যদি সে উল্লেখ করে স্ত্রীকে জানিয়ে দিয়ে থাকে তবে তা দেনমোহর হিসেবে গন্য হবে। আবার অনেকে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখে স্ত্রীর জন্য আর সেটাকে দেনমোহর বলে চালিয়ে দেয়। এটাও সঠিক না।

তবে যদি ঐ টাকার উপর স্ত্রীর নিরুঙ্কুশ অধিকার থাকে তা ব্যাবহার ও খরচের উপর তাহলে তা দেনমোহর হিসেবে গন্য হবে।বিয়ের সময় স্বামী যে অলংকার, প্রসাধনী স্ত্রীকে দেয় তাও দেনমোহরের কোনো অংশ না।

৩) আবার দেখা যায়, বাসর রাতে অনেকে স্ত্রীর কাছ থেকে দেনমোহর মাফ করিয়ে নেয় আবার স্বামীর মৃত্যু হলে পরিবারের অন্য মহিলারা স্ত্রীকে দেনমোহর মাফ করে দিতে অনুরোধ করে।এতে আসলে দেনমোহর মাফ হয়ে যায় না।কারন এখানে অনুভুতিকে পুঁজি করে মাফ করিয়ে নেয়া হয়ে থাকে প্রায়শই।

কেবল মাত্র কোনো প্রকার ছলনা, প্ররোচনা,চাপ ও হুমকি ছাড়া এবং যদি স্বামী অস্বচ্ছল হয় আর স্বেচ্ছায় যদি স্ত্রী দেনমোহরের কিছু অংশ বা পুরো মোহরানা মাফ করে দেয় তাহলেই স্বামী তা থেকে মুক্তি পাবে। অন্যথায় না।

24243 comments21 sharesLikeCommentShare

Facebook
Twitter
LinkedIn

সাম্প্রতিক পোস্ট

নামজারী আবেদন নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া

কামাল দুই বিঘা জমির মালিক এবং সে নিয়মিত সরকারী খাজনা পরিশোধ করে থাকে। সরকারী অফিসে লেখা আছে যে, কাওলা মৌজার আরএস ৫১০ দাগের ২ বিঘা জমির মালিক কামাল। পরবর্তীতে, কামাল উক্ত জমি রহমত এর নিকট বিক্রী করে। যেহেতু বর্তমানে রহমত মালিক কাজেই কামালের নাম কেটে রহমতের নাম সরকারী কাগজপত্রে লিপিবদ্ধ করাই মূলত নামজারী ।

Read More »
তালাক দেওয়ার নিয়ম

বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার পদ্ধতি

বিদেশ থেকে আম-মোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে প্রতিনিধি নিযুক্ত করে তালাক প্রদানের যথাযর্থতা সম্পর্কে আইনে সুনির্দিষ্ট কোন বক্তব্য নেই। প্রচলিত প্রাকটিস এবং আইনজীবীদের পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই আম-মোক্তারনামা মূলে তালাকের একটা প্রচলন আছে। তবে এ ধরনের তালাক বহুল বিতর্কীত কারন তালাক সংশ্লিস্ট আইনের কিছু বিধান প্রকৃত অর্থে চর্চা করার সুযোগ থাকেনা।

Read More »

আমমোক্তারনামা দলিল বাতিলের নিয়ম

পাওয়ার অব এটর্নি বা আমমোক্তারনামা দলিল এমন একটি লিগ্যাল ডকেুমেন্ট যার মাধ্যমে একজন ব্যাক্তি তাহার পক্ষে কোন নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদন করার জন্য তাহার মনোনীত ও বিশ্বস্ত ব্যাক্তিকে ক্ষমতা অর্পণ করে।  আমাদের দেশে পাওয়ার অব এটর্নীর কথা শুনলে অনেকেই জমি-জমার ক্ষমতা অর্পণকে বুঝায়। প্রকৃতপক্ষে পাওয়ার অব এটর্নি বা আমমোক্তারনামা দলিলের মাধ্যমে জমি-জমা ছাড়া আরো অনেক কাজ করা যায়।

Read More »

Recent