ডিভোর্স দিলে কি দেনমোহর দিতে হয়?
দেনমোহরের সাথে তালাকের কোন সম্পর্ক নেই। দেনমোহরের সম্পর্ক বিবাহের সাথে। বিবাহ সম্পন্ন হবার পর পরই বরের নিকট স্ত্রীর দেনমোহর পাওনা হয়ে যায়। পরবর্তীতে, যে কোন পক্ষ বৈবাহিক সম্পর্ক ছিন্ন করলে ও বউয়ের দেনমোহরের পাওনা অবশ্যই শোধ করতে হবে।
জীবনের পথ কখনোই মসৃণ না। এক সাথে পথ হাটার স্বপ্ন ও সংকল্প নিয়েই প্রতিটা সম্পর্কের পরিণয় হয়। বিভিন্ন প্রতিকূলতা কখনো মধ্য পথে বাধাঁ হয়ে দাড়াঁয়। ফলাফল, ডিভোর্স!
ডিভোর্স প্রদানের পর প্রথমত যে বিষয়েটি সামনে এসে দাড়াঁয় তা হলো দেনমোহর। যেহেতু আমাদের দেশে বেশির ভাগ বিয়েতে নগদে দেনমোহর পরিশোধ করা হয় না কাজেই, বিবাহের পর বর পক্ষ সুযোগ খুঁজে দেনমোহর ফাকিঁ দেয়ার আর কণে পক্ষ খুজতে থাকে দেনমোহর আদায়ের সুযোগ। যদিও কিছু কিছু লোক স্ব-ইচ্ছায় বিয়ের বা তালাকের পরপর দেনমোহর দিয়ে দেয় তবু কিছু দেনমোহর ফাকিঁ দিতে তালবাহানা করতে থাকে। আর যদি, বউ তালাক দিয়ে থাকে তবে তো কথাই নেই! সবাই বিভিন্ন আইন দাঁড় করিয়ে নিয়ে আসে যে, বউ তালাক দিলে আবার দেনমোহর কিসের?
আমাদের দেশে একটি ভুল ধারনা প্রচলিত আছে যে, বউ যদি তালাক প্রদান করে তাহলে দেনমোহর পরিশোধ করা লাগেনা। অনেকে জেনে বলে আবার অনেকে না জেনেই এমন সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়। মূলত দেনমোহরের বিষয়টি ইসলামী আইনেই নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে। আমাদের দেশীয় আইনের কোন প্রভাব নেই ইসলামে বেধেঁ দেয়া বিধি নিষেধের উপর। অনেকেই আইন – আদালতের ভয়ে দেনমোহর শোধ করে দেয় যা বোকামী ছাড়া কিছুনা। আমাদের তো উচিৎ আল্লাহর ভয়ে বা আল্লাহকে সন্তষ্ট করার উদ্দেশ্যে আল্লাহর বিধি বিধানকে সন্মান জানিয়ে দেনমোহরের পাওনা পরিশোধ করা।
আদালতে মামলা-মোকদ্দমা
বেশীর ভাগ নারীরাই দেনমোহর আদায়ের জন্য দ্বারস্ত হয় আদালতের। আদালতে মামলা-মোকদ্দমা করে বহু জটিলতার পর যখন বর পক্ষ দেখতে পায় দেনমোহর দেয়া ছাড়া আর কোন উপায় নাই তখন দেনমোহর পরিশোধ করে। যেহেতু দেনমোহর পরিশোধ করতেই হবে, তালাকের সাথে সাথে তা পরিশোধ করে দিলে দুই পক্ষের জন্যই অনেক সুবিধা হয়। উভয়পক্ষের মধ্যে ভাল সম্পর্ক বজায় থাকে এবং হয়রানি থেকে বেচেঁ যায়।
তালাকের পর দেনমোহর ছাড়াও স্ত্রীর তিন মাসের ইদ্দতকালীন খরপোষ এবং সন্তান থাকলে সন্তানের ভরণপোষণ দিতে হবে সাবালকত্ব অর্জন করা অব্দি। যত যাই করুন, এ নিয়মের কোন ছাড় নেই! টাকা আপনার দিতেই হবে, দু-দিন আগে না হয় পরে।
যদিও আমাদের দেশে তালাক দ্রুত হারে বেড়ে যাচ্ছে তবু সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধি হচ্ছে না। সংসারের অশান্তি ও অমিল থেকে রেহাই পেতে দুই পক্ষ তালাকের দিকে অগ্রসর হলেও তালাকের পর এক পক্ষ আরেক পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা, অপবাদ, অভিশাপ দিয়ে অশান্তিকে আরো বাড়িয়ে তুলে।
আমাদের কাছে যত ক্লায়েন্ট মামলা করতে আসেন তাদের বেশীর ভাগ মানুষ ক্ষোভ ও রাগের মাথায় মিথ্যা বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে আসেন মামলা করতে। তাদের উদ্যেশ্য শুধু প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। আইন বিশারদ সব সময় এহেন ক্রোধান্বীত মামলা-মোকদ্দমা নিরুৎসাহিত করে। শান্তিপূর্ণ ভাবে উভয় পক্ষ মিলে মিশে এসব বিষয় আপোষ করে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ।