কোর্ট ম্যারেজ এর নিয়ম, কি কি লাগে, খরচ কত ?
কোর্ট ম্যারেজ / পালিয়ে বিয়ে করার যত কিচ্ছা-কাহিনী
প্রত্যেকটা পালিয়ে বিয়ে করার পেছনেই ২ টা সংসার, কিছু জীবন এবং কতগুলো স্বপ্নভঙ্গের ইতিহাস থাকে।
তাই একজন নীতিবান আইনজীবী সব সময় উক্তরূপ বিয়েকে নিরুৎসাহিত এবং এভয়েড করে থাকেন।
এই লিখাটিও পালিয়ে বিয়ে করা নিরূৎসাহিত করতে সচেতনতা ও পালিয়ে বিয়ে করা আতংকিত ও বিপদগ্রস্ত দের আইনি জামেলা মোকাবেলার পথ দেখাতে লিখা।
পালিয়ে বিয়ে করতে যেয়ে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে যেমন, মেয়ের পরিবার অপহরণ মামলা, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে নারী নির্যাতনের মামলা, মেয়ের বয়স যদি ১৬ বৎসরের কম হয় তাহলে অপহরণ করে ধর্ষন সহ আর ও অসংখ্য মামলা, যার পরিণতি হতে পারে জীবনের সকল আশা আখাংকার সমাধি।
যারা ভালবাসার মানুষটিকে কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চান না তারা নতুন জীবন শুরুকরার আগে আইনি বিষয় জেনে অগ্রসর হওয়া উচিৎ। নতুবা নতুন সংসার শুরু করার আগে ভাগ্যে জুটবে জেল ও জরিমানার গ্লানি।
কোর্ট ম্যারেজ করতে গেলে মুসলিম ছেলে মেয়েদের মনে প্রথম প্রশ্ন জাগে –
১। বিয়েটার বৈধতা কেমন হবে ?
২। বিয়েটাই বা কোথায় করতে হবে ?
৩। কোর্টে নাকি কাজী অফিসে ?
৪। ছেলেরা ভাবে, মেয়ের বাবা যদি মামলা দেয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে তাহলে কি জেল টেল খাটতে হবে ? ইত্যাদি।
অনেকে ভাবেন এসব ক্ষেত্রে হয়ত কোর্ট ম্যারেজ করতে হবে।
কোর্ট ম্যারেজ টার্মটা আমরা প্রায়ই শুনে থাকি। কিন্তু এটা নিয়ে অনেকের ভুল ধারনা আছে।
অনেকে যারা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া বা পালিয়ে বিয়ে করতে চায় তারা কোর্ট মারেজকরতে যায় বা করতে চায়। অনেকে মনে করেন কোর্ট ম্যারেজ হয়তো কোর্টে গিয়ে বিয়ে করা। অথবা মাজিস্ট্রেট-এর সামনে বিয়ে করা। আসলে তা নয়।
কোর্ট ম্যারেজ
কোর্ট ম্যারেজ করতে হলে আপনাকে যেতে হবে কোন আইনজীবীর কাছে। তিনি আপনাদেরকে (বর-কনে) ২০০ টাকার স্ট্যাম্পে একটি হলফনামায় সই করাবেন যাতে লিখা থাকবে আপনারা প্রাপ্তবয়স্ক এবং স্বজ্ঞানে, স্বেচ্ছায়বিয়ে করেছেন।
অত:পর কাজীর মাধ্যমে কাবিননামায় সই করে রেজিস্ট্রী করতে হবে । কাজি সাহেবকে আপনাদের জন্ম নিবন্ধন কার্ড বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড দেখাতে হবে বয়স প্রমানের জন্য।
বিয়ের বয়স অবশ্যই মেয়ের বেলায় আঠারো ও ছেলের ক্ষেত্রে একুশ বৎসর হতে হবে।
প্রাপ্ত বয়স্ক ২ জন পুরুষ অথবা ১ জন পুরুষ ও ২ জনমহিলা সাক্ষী থাকতে হবে।
আর ঐ কাবিননামাই আপনাদের বিয়ের প্রধান আইনী দলিল।
নোটারী পাবলিকের কাছে গিয়ে আপনি শুধু ঐ দলিলের সাপোর্টর জন্য আরও একটা সম্পূরক আইনী দলিল করে রাখলেন ভবিষ্যতে মামলা হলে সুবিধা পেতে। কাবিননামা থাকলে আপনার বিয়েরপক্ষে আর কোনো ডকুমেন্টই লাগবেনা। কাবিননামাই সব।
বিয়ে হয়ে গেলে অনেক সময় দুই পক্ষের বাবা মা-রা মেনে নেয়, অনেক সময় মেনে নেয়না। অনেক সময় মেয়ের বাবা ক্ষেপে গিয়ে ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করে বসে।
মামলাগুলো হয় সাধারনত অপহরন পূর্বক ধর্ষনের। নারী ও শিশু নির্যাতান দমন আইনে মামলার ধারাগুলো জামিন- অযোগ্যএবং আমলযোগ্য। অর্থাৎ পুলিশ এসবক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট বা আদালতের অনুমতি ছাড়াই আসামিকে এরেস্ট করতে পারে।
আরো পড়ুন:
কোর্ট ম্যারেজ : ভিন্ন ধর্মে বিয়ে
এক পক্ষ হিন্দু বা মুসলিম বা অন্য ধর্মের হলেও, ধর্ম পরিবর্তন না করেই বিয়ে করা সম্ভব। Special Marriage Act-III of 1872 এর আওতায়। এর জন্য কাজীর মত আলাদা ম্যারেজ রেজিষ্টার আছেন।
মেয়েদের জন্য সতর্কতা
পালিয়ে বিয়ে করার পুর্বে মেয়েদেরকে অনেক কিছু ভেবে সিদ্দান্ত নেওয়া উচিৎ। ছেলেটির স্বভাব চরিত্র কেমন, কতদিনের চেনা জানা, ছেলেটির কোন উপার্জন আছে কি নাই, ভালবাসার মুল্য বা গুরুত্ব তার কাছে কত খানি ?
কারণ ভালবাসা যদি অন্ধ হয় তাহলে অন্ধকারে পথ হাতড়ে খোজা মুশকিল।
আর পরিবারের অমতে বিয়ে করার মানে এই নয় যে পরিবারের মান সম্মান ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া। তবে যাতে সমান মর্যাদা সম্পন্ন পরিবার হয় তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। সর্বপরি পরিবারের অমতে বিয়ে করলে পরিবারের support না ও থাকতে পারে।
ইতিকথা
যাই করেন ভেবে চিন্তে করবেন। নতুবা আপনার একটি ভুল সিদ্ধান্তে গোটা মানব জাতির বিবেক লজ্জায় মাথা নুইয়ে মাটিতে লুটাবে। হলের টয়লেট, ময়লার ডাষ্টবিন কিংবা জাহাঙ্গীর নগরের টাংকের ভিতর পরিত্যক্ত নবজাতকের মৃত আত্বারা আপনার ভুল সিদ্ধান্তের ফল হয়ে এই পৃথীবিকে অভিশপ্ত করবে।